অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে আগামী ডিসেম্বরে যেই নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে মুলত এটাই হলো দেশটির গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার শেষ সুযোগ। কারন বর্তমানে যেভাবে দেশটিতে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটছে, মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মীদের উপর যেভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, সরকারের সমালোচকদের কন্ঠ যেভাবে চেপে ধরা হচ্ছে এবং এর পাশাপাশি দেশে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, গুম ও অপহরনের ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে তা নি:সন্দেহে উদ্বেগজনক।
বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের স্ট্রাটসবার্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যে অধিবেসন বসে সেখানে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন শৃংখলা পরিস্থিতির বিষয়ে উপরোক্ত মতামতগুলো দেয়া হয়। অধিবেসনের শেষে একটি প্রস্তাবনাও অনুমোদন করা হয় যেখানে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের অংশ নেয়ার জন্য আহবান জানানো হয়। একই অধিবেসন থেকে বাংলাদেশে সম্প্রতি পাশ হওয়া বিতর্কিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটিও সংশোধন করার সুপারিশ করা হয়।
এই আলোচনায় অংশ নিয়ে অস্ট্রিয়ার রাজনীতিবীদ জোসেফ ওয়েদেনহোলজার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আগামী নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। যদি সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হয় তাহলে ইউরোপের উপরও এর প্রভাব পড়বে। তিনি তার আলোচনায় সুশীল সমাজের উপর সরকারের দমন পীড়ন, এবং ক্রমবর্ধমান বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, গণগ্রেফতার ও অপহরণের ঘটনাগুলোকে তুলে ধরে বলেন বাংলাদেশের মিডিয়াও এখন হুমকির মুখে রয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দন্ডিত হয়ে জেলে থাকায় আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে তার দলসহ দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ মনে করে যে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে নির্বাচনের আগে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী করার আহবান জানান যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত জানাতে পারে এবং নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে পারে।
বৃটিশ রাজনীতিবীদ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য চার্লস টানোক এই প্রসংগে বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু উন্নয়ন হলেও দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যপক অবনতি হয়েছে। নন্দিত ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমকে গ্রেফতারের ঘটনাও এর ইংগিত বহন করে। বৃটিশ রাজনীতিবীদ সাজ্জাদ করিম বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে আরো অনেক কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অপর এক ইউরোপীয় আলোচক বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যদি সকল দল অংশ না নেয়, নির্বাচনটি যদি শান্তিপূর্ন না হয় তাহলে দেশটির গনতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিশনার ক্রিসটস স্টাইলিয়ানিদেস বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে তার কমিশন বরাবরই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। যেভাবে সাংবাদিক, ছাত্র এবং মানবাধিকার কর্মীরা এখানে নিপীড়নের শিকার হয় তা নি:সন্দেহে উদ্বেগজনক। নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি অনুমোদন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্ত চিন্তার চর্চার পথকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের একমাত্র পথ একটি নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য ও অংশগ্রহনমুলক নির্বাচন। আর সেটা আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশও সরকারকেই সৃষ্টি করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তাদের প্রস্তাবনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। এর সাথে সাথে তারা মিডিয়া, ছাত্রসমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের উপর সরকারের অত্যাচার ও নিপীড়নের সমালোচনা করেছে। বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডগুলোর ব্যপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য মিডিয়াগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে। সেই সাথে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের অপহরনসহ গুম ও অপহরনের সকল ঘটনা তদন্ত করার জন্যও মিডিয়াগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে।
একই অধিবেসন থেকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অবিলম্বে প্রখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী শহীদুল আলমের মুক্তি দাবী করেছে। তারা বিতকির্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনী চেয়েছে। মৃত্যুদন্ডের আইন বাতিল করার সুপারিশ করেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।