অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রায়ই দেখা যায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ হয়তো সন্দেহভাজন জঙ্গী ধরছে কিংবা ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী আটক করছে। এরপর মিডিয়াতে ফলাও করে বলা হচ্ছে এই অভিযানকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসংখ্য জিহাদী বইও জব্দ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে যত্রতত্র জিহাদী বই শব্দটি ব্যবহার করার কারনে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর ধারণার জন্ম হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, যদি কোন বইতে কুরআন বা হাদীসকে অপব্যাখ্যা করে মানুষকে চরমপন্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয় তাহলে সেই বইটি সমস্যাকর। কিন্তু ঢালাওভাবে ইসলামী বই পেলেই তাকে জংগী বই বা জিহাদী বই হিসেবে চালিয়ে দেয়া ঠিক নয়। এমনকি শুধুমাত্র ইসলামী বই সংগ্রহে রাখায় অনেক সাধারন মানুষকেও জঙ্গী বা সন্ত্রাসী হিসেবে হয়রানি করা হচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়।
যেসব বই কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখা করে মানুষকে সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দিচ্ছে তাদেরকে জিহাদী বই না বলে জঙ্গী বইও বলা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবুল বারাকাত। তিনি বলেন জঙ্গীবাদকে ঠেকাতে হলে তরুন প্রজন্মকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই।
অন্যদিকে সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলছেন, “শুরু থেকেই জিহাদী বইসহ আটক করার ঘটনাগুলো আমাদের কাছে সন্দেহজনক ও রহস্যময় মনে হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই মনে হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতি উৎসাহী হয়ে কিছু টার্গেট করা মানুষকে হয়রানি করছে। তারা অনেক কথা অতিরঞ্জিতভাবেও বলছে যা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জিহাদী বইয়ের কোন সংজ্ঞাই দেয়া হলোনা। তারা মানুষকে হয়রানি করার জন্য সাধারন ইসলামী সাহিত্যকেও জিহাদী বই বলে চালিয়ে দিচ্ছে। অথচ পুলিশ কোন বই রাখার অপরাধে কাউকে গ্রেফতারই করতে পারেনা যদি সেই বইটিকে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ ঘোষণা না করেন। অথচ এরকম কোন নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা প্রণয়ন না করেই পুলিশ অনেকক্ষেত্রে অনেককে নানা ধরণের বই এমনকি কুরআন শরীফ রাখার অপরাধেও আটক করছে। তিনি আরো বলেন, মাদক বা জঙ্গী যার বিরুদ্ধেই পুলিশ অভিযান চালাক না কেন সেটা এমনভাবে চালাতে হবে যাতে কারও মনে কোন প্রশ্ন তৈরী না হয়।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, জঙ্গীরা যেভাবে এই জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করে তা ইসলামের জিহাদের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা জিহাদ অনেক ব্যাপক একটি বিষয় যার মাধ্যমে সমাজ ও ব্যক্তির উন্নয়ন ও উৎকর্ষতা সাধিত হয়। মানুষকে ভয় দেখানো বা ধর্মের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা কখনোই জিহাদ হতে পারেনা। আর জিহাদ অনেক পবিত্র একটি শব্দ। তাই যদি কোন বইতে ইসলামের অপব্যাখ্যা করে যদি মানুষকে চরমপন্থার দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সেটাকে জঙ্গী বই বলা উচিত, কোনমতেই জিহাদী বই নয়।”
অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতরের এডিশনাল ডিআইজি মো: মনিরুজ্জামান বলেন, যে বইগুলো মানুষকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থার দিকে নিয়ে যায় প্রচলিত ধারণায় সেই বইগুলোকেই আমরা জিহাদী বই বলি। এই ধরনের বইয়ের প্রকাশ ও বিতরণ সম্পুর্নরূপে নিষিদ্ধ। তবে আমার জানামতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি এখনো কোন বই নিষিদ্ধ করেনি। তাছাড়া আমাদের কঠোর নজরদারি স্বত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক জিহাদী বই এখনো অবাধে বিক্রি হচ্ছে। আর আমরা তখনই কোন বই জব্দ করি যদি দেখি তাতে এমন কোন উপাদান আছে যা মানুষকে জঙ্গীবাদে উৎসাহিত করতে পারে।
অন্যদিকে র্যাবের মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, যদিও ইসলামে জিহাদের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য ভিন্ন কিন্তু তথাকথিত এই জিহাদী বইগুলো ইসলামের এবং বিশেষ করে ইসলামে যে পবিত্র জিহাদের কথা বলা হয়েছে- তার সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে বলেন, জিহাদী একটি ধর্মীয় শব্দ। আমি নিজেও মনে করি যে কোন বইকে জিহাদী বই হিসেবে আখ্যায়িত করা ঠিক নয়। যে বইগুলো সন্ত্রাসের পথকে বিকশিত করে, আমাদের সেই বইগুলোকে জিহাদী বই হিসেবে পরিচিত করানো উচিত নয়। এগুলোকে জঙ্গী বই বা চরমপন্থী বই হিসেবেই দেখানো উচিত। তিনি বলেন, এইসব জঙ্গী বইগুলো যেসব প্রকাশনী সংস্থার নামে বের হয় তারাও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পুরো প্রকাশনা সংস্থাই ভুয়া। এই নামে হয়তো কোন প্রকাশনীই নাই।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই পর্যন্ত বেশ কিছু বই পেয়েছি যার লেখকেরা জঙ্গী এবং যারা ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন বা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। এই ধরনের বই পেলেই সাধারনত সেগুলো সংগ্রহে রাখার অপরাধে আমরা কাউকে গ্রেফতার করি। এই ধরনের বইয়ের তালিকায় আছে কিতাবুল ইমান, কিতাবুল আকাইদ, তাওহীদের মুল শিক্ষা, দ্বীন কায়েমের পথ, কিতাবুদ দাওয়াত, উম্মুক্ত তরবারী এবং তাজকিয়াতুন নুফুস।