তুরস্ক সরকার মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছে যে তাদের হাতে অডিও এবং ভিডিও প্রমাণ রয়েছে যে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের ভেতর খুন করা হয়েছে।
মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, এসব রেকর্ডিং-এ দেখা যাচ্ছে সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কনসুলেটের ভেতরে জামাল খাসোগজিকে আটক করেছে, তারপর তাকে হত্যা করেছে এবং তার দেহকে খণ্ড-বিখন্ড করেছে।
বিশেষভাবে অডিও রেকর্ডিং থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের যোগসাজশের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে তারা বলছেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা, যিনি এই অডিও এবং ভিডিও সম্পর্কে জানেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, “জামাল খাসোগজি কনসুলেটের ভেতরে ঢোকার পর সেখানে কী ঘটেছিল তার একটা ধারণা ঐ অডিও রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে।”
“আপনি শুনতে পাবেন লোকজন আরবিতে কথা বলছে,” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, “আপনি শুনতে পাবেন তাকে (জামাল খাসোগজিকে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে এবং পরে খুন করা হচ্ছে।”
তুর্কী কর্তৃপক্ষ অন্য যে মার্কিন কর্মকর্তাকে এই প্রমাণ দেখিয়েছে, তিনি বলছেন এসব রেকর্ডিং থেকে জামাল খাসোগজিকে মারধরের প্রমাণ মিলেছে।
জামাল খাসোগজি এক সময় সৌদি রাজপরিবারের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
কিন্তু বর্তমান সৌদি সরকার এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচনা করে তিনি সংবাদপত্রে লেখা ছাপিয়েছেন।
তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের ঐ খবরে বলা হয়েছে, মি. খাসোগজি নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথেই তুরস্ক কেন সৌদি আরবকে দোষারোপ করেছে এসব প্রমাণ থেকে তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কিন্তু তুর্কী সরকার এসব অডিও এবং ভিডিও প্রকাশ করতে নারাজ কারণ এতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে তুরস্ক একটি বিদেশি দূতাবাসের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।
সৌদি আরব এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
মি. খাসোগজির অন্তর্ধানের ঘটনা যৌথভাবে তদন্ত করার জন্য তারা তুরস্কের প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে এবং আঙ্কারা সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলে ওয়াশিংটন পোস্ট খবর দিয়েছে।
কেন সৌদি কনস্যুলেটে এসেছিলেন জামাল খাসোগজি?
মি. খাসোগজির কনস্যুলেটে আসার উদ্দেশ্য ছিল, তার পূর্বতন স্ত্রীকে যে তিনি ডিভোর্স (তালাক) দিয়েছেন – এ মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র নেয়া, যাতে তিনি তুর্কী বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে পারেন।
মি. খাসোগজি তার মোবাইল ফোনটি মিস চেঙ্গিসের হাতে দিয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকেন।
মিজ চেঙ্গিস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, মি. খাসোগজি এ সময় বিমর্ষ এবং মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন – কারণ তাকে ওই ভবনে ঢুকতে হচ্ছে।
হাতিস আরো বলেন, মি. খাসোগজি তাকে বলেছিলেন যদি তিনি কনস্যুলেট থেকে বের না হন – তাহলে তিনি যেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করেন।
তিনি জানান, তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষা করেন মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা থেকে মধ্যরাতের পর পর্যন্ত।
কিন্তু তিনি জামাল খাসোগজিকে কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেন নি।
বুধবার সকালবেলা কনস্যুলেট খোলার সময় তিনি আবার সেখানে উপস্থিত হন।
তখন পর্যন্ত মি. খাসোগজির কোন খোঁজ মেলেনি। তার পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা