অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আমলনামা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের একাধিক সংস্থা এ উদ্দেশ্যে মাঠ পর্যায় থেকে নাম ঠিকানা সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত সংশ্লিষ্ট কাউকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খোঁজার নাম করেও কর্মকর্তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রশাসনকে ব্যবহার করে পাঁচ বছর অতিক্রম করলেও আসন্ন নির্বাচনও নিজেদের অধিনেই সংসদ না ভেঙে আয়োজন করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা মূলত জোরপূর্বক নিজেরা ফের ক্ষমতাসীন থাকারই প্রচেষ্টা।
নিজেদের অধীনে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে যাবতীয় প্রচেষ্টাই করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। সবশেষ তারা নির্বাচনী কর্মে জড়িত সকল কর্মকর্তাদেরকে দলীয় নিয়োগ দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য কর্মকর্তাদের অমলনামা যাচাইয়ের নাম করে দলীয় কর্মী ও অনুগত হিন্দু ধর্মালম্বীদের নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছে সরকার।
রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং এবং সহকারী পোলিং অফিসারের নিয়োগ নির্বাচন কমিশন দিয়ে থাকে। জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিসার বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রিজাইডিং অফিসার এবং সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার-সহকারী পোলিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তবে এবার প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
তিনশত সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪৯৫টি উপজেলা ও ৬৪ জেলা রয়েছে। এসবের মধ্যে ৪০ হাজার ১৯৯ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব কেন্দ্রের জন্য ভোটগ্রহণ কক্ষ থাকবে কমবেশি দুই লাখ। অর্থাত্ প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতিকক্ষের জন্য একজন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতিকক্ষের জন্য দুইজন করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। এ হিসাবে সকল কেন্দ্র ও কক্ষের জন্য এ পর্যায়ের কর্মকর্তা দরকার সাড়ে ৬ লাখ। যদিও নির্বাচন কমিশনার সাত লাখ কর্মকর্তার চাহিদা নির্ধারণ করে রেখেছে। এ ছাড়া সংসদীয় আসন প্রতি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা লাগবে ৩০০ জন। রিটার্নিং অফিসার লাগবে ৬৪ জন। এর পাশাপাশি রয়েছে প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেখানে অন্তত ৫ জন করে কর্মকর্তা থাকেন। সে হিসাবে আরও দরকার ২ হাজার ৪৭৫ জন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় থাকেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এ ছাড়া নির্বাচন কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য পদস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিটি সংসদীয় আসনে পৃথক টিম গঠন করা হয়ে থাকে।
জানা যায়, তালিকা সংগ্রহের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এটি শেষ হলে শুরু হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আমলনামা জরিপের কাজ। দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। জামায়াত সংশ্লিষ্টতা এবং অতিমাত্রায় নিরপেক্ষতা। এদেরকে বাদ দিয়ে দলীয় ও অনুগতদেরকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যদি কোন কর্মকর্তা অতিমাত্রায় নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন বলে সন্দেহ থাকে তাহলে তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব নাও দেওয়া হতে পারে। আবার জামায়াত সংশ্লিষ্টতা যেমন বংশ পরম্পরায় কিংবা কখনো এই শক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল কি না তেমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকেও দায়িত্ব দেওয়া হবে না। এমনকি প্রয়োজনে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই তাদেরকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে।