মুসাফির রাফি, অ্যানালাইসিস বিডি
সকাল বেলা ফেসবুক দেখতে বসেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অনেকের টাইম লাইনে একটা ভিডিও দেখতে পেলাম। বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বর্ষিয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান শহীদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরে হামলা চালিয়ে তার নামফলকটি ভেঙ্গে ফেলেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারী গোলাম রব্বানীসহ কয়েকশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
গোলাম রব্বানী ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারন সম্পাদক। সে শুরু থেকেই তার সভাপতির চেয়ে বেশী আলোচিত কেননা সে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য নানা ধরনের কাজ করে। দুই মাস আগে নিরাপদ আন্দোলনের দাবীতে ছাত্ররা যখন আন্দোলন করে তখন আওয়ামী লীগের অফিস থেকে জিগাতলায় ছাত্রদের উপর হামলা চালানো হয়। বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়, ছাত্রীদেরকে হেনস্তা করা হয়। তখন এই গোলাম রব্বানী কিছূ ছাত্রদেরকে আওয়ামী লীগের অফিসের ভেতরে নিয়ে তাদেরকে দিয়ে জোরপূর্বক সংবাদ সম্মেলন করিয়ে নেয় এবং নিজের দল ও সংগঠনকে কলংকমুক্ত করার চেষ্টা চালায়।
এরপর কয়েকদিন লোক দেখানো কিছু কাজ করে। যেমন রিকশাওয়ালাদের খাওয়ানো, মজুরদেরকে সম্মান করা। এই সব ঘটনার স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফেসবুকে ব্যপকভাবে প্রচার করা হয়। তার সেই ফানি কার্যক্রমগুলোই তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। যদিও এগুলো যে লোক দেখানো ছিল তা সবাই পরে বুঝতে পারে কেননা তখন থেকে আজ অবধি এরকম আর কোন কাজের তথ্য জাতি পায়নি। মাইটিভিতে আলোচনায় গিয়ে কান্নাকাটি করে কিংবা টেলিভিশনে শেখ মুজিবকে নিয়ে আবেগী ক্রন্দন করেও গোলাম রব্বানী বেশ হাসির পাত্র হয়ে উঠে।
তবে এবার সে যা করেছে তাতে হাসির পাত্র কতটা হবে জানিনা কিন্তু ঘৃনার পাত্র নিশ্চয়ই হবে। চট্টগ্রামে দলীয় সফরে গিয়ে সেই কবরস্থানে যায় যেখানে তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসিতে শহীদ হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সমাহিত আছেন। আমি জানিনা, ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সেখানে কেন গিয়েছিলেন, এই নামফলক ভাঙ্গা তার পূর্ব নির্ধারিত দলীয় কর্মসূচীর অংশ ছিলো কিনা?
কবরের নামফলকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামের আগে শহীদ লেখা থাকায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং শ্লোগান দিয়ে সেটা ভাংচুর করে। আর যেন কখনো কেউ তার নামের আগে শহীদ না লাগাতে পারে সেটা পাহারা দেয়ার জন্য সে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে যায়। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তীব্র আওয়াজে তখন জয় বাংলা বলে শ্লোগান দেয়া হচ্ছিলো।
আমি মনে করি, ছাত্রলীগের অপকর্মের কালো তালিকায় গতকাল নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত হলো। ছাত্রলীগের হাত থেকে শুধু জীবিত মানুষ নয়, মৃত মানুষ এবং তাদের কবরও নিরাপদ নয়। আপনি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কাউকে বিরোধীতা বা অপছন্দ করতেই পারেন। কিন্তু তার কবরের সাথে এহেন আচরন নি:সন্দেহে বেয়াদবী। পরিবার বা দল শহীদ দাবী করলেই কেউ যেমন শহীদ হয়না, তেমনি নামফলক ভেঙ্গে ফেললেই তার শাহাদাতের দাবী মিথ্যাও হয়ে যাবেনা। আল্লাহ জানেন তিনি কি মর্যাদায় কাকে কবুল করবেন।
কিন্তু নিছক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক গতকাল যেভাবে কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করলেন, আমি মনে করি সাধারন মানুষ তো বটেই, আওয়ামী লীগের বিবেকবান মানুষেরাও সেটাকে ভালভাবে নিবেনা। তাছাড়া সেই কবরস্থানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়াও আরো বহু মানুষের কবর আছে। এভাবে শ্লোগান দিয়ে জুতা দিয়ে মাড়িয়ে তাদের কবরের প্রতিও অসম্মান জানিয়েছে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। আমাদের কারও ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যেই দলই করি, আর যত ক্ষমতার মালিক হইনা কেন, দুদিনের এই দুনিয়ায় আমরা কেউই স্থায়ী নই। কবরেই আমাদের সবাইকে যেতে হবে। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে আল্লাহ এই বোধোদয় দিন, এই দোয়া করি।