অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশ কতগুলো একাউন্ট ট্র্যাক করেছে এবং দেশব্যাপী বেশ কিছু মানুষকে আটকও করেছে। এদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো, নিরাপদ সড়কের দাবীতে সম্প্রতি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের যে আন্দোলন হয় সেটাকে কঠোর হস্তে দমন করায় তারা সরকারের সমালোচনা করেছেন।
এমন তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছে মূলত দমন পীড়ন, আটক অভিযান এবং ছাত্র ও সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করে সরকার আসলে বাক স্বাধীনতা হরণ করতে চায়।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে সরকার দলের ক্যাডাররা আন্দোলনকারী ছোট ছোট বাচ্চাদের উপর হামলা চালালেও পুলিশ সেখানে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে। আর পুলিশ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ব্লক রেইড চালায়। সেখানকার বাড়ীতে বাড়ীতে তল্লাশী চালানো হয় এবং মেসগুলো থেকে ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছাত্রদেরকে গণহারে আটকও করা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার সমালোচনা সহ্য করতে পারছেনা। সাধারন মানুষ তো বটেই এমনকি প্রথিতযশা আলোকচিত্র শিল্পী শহীদুল আলম ও মিডিয়াকর্মী কাজী নওশাবা আহমেদকেও এই আন্দোলনে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনও করা হয়েছে। আটককৃতদেরকে আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই ধারার আওতায় যে কোন ব্যক্তিকে আটক করা যায় যদি তার বিরুদ্ধে এমন কোন জিনিস প্রকাশ করার অভিযোগ থাকে যেটা জাল কিংবা এমন কোন কাজ করার অভিযোগ থাকে যার কারণে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে কিংবা দেশ বা সরকার কিংবা বিশেষ কোন ব্যক্তির মর্যাদাহানির সুযোগ থাকে।
এই অস্পষ্ট আইনটি দিয়ে সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরোধী মত পোষনকারীদেরকে শায়েস্তা করছে। আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানা মহলের সমালোচনায় সরকার এই আইনের অপপ্রয়োগ সম্বন্ধে ইতোপূর্বে স্বীকার করলেও তারা আইনটিকে বাতিল করার জন্য কার্যকর কোন উদ্যেগও নেয়নি।
পুলিশের সাইবার অপরাধ বিষয়ক বিভাগ গত ৭ আগষ্ট ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন। যাতে তারা বলেন, “আমরাও নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু জনগনের কাছে আমরা অনুরোধ করছি যারা বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি করছেন তাদের ব্যপারে আপনারা আমাদেরকে তথ্য দিন। আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে বদ্ধ পরিকর।
ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন কিংবা শহীদুল আলমের মুক্তি চেয়েছেন এমন অনেকেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে জানিয়েছেন যে তাদেরকে কে বা কারা যেন নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটি খুবই বাজে ভাবে মানুষকে হয়রানি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম ঢাকা ট্রিবিউনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, এই আইনের আওতায় যেসব মামলা আসছে পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে যে অধিকাংশ মামলাই বানোয়াট এবং মানুষকে স্রেফ হয়রানি করার জন্যই এই মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
ব্রাড এডামস মনে করেন, সরকারের সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। এমনকি তরুন ছেলেমেয়েরাও যে সমালোচনা করছে তাও সহজভাবে নেয়া উচিত, কেননা তাহলেই গনতন্ত্র কার্যকর ও সংহত হবে। একই সাথে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ৫৭ ধারাটি সম্পুর্ন বাতিল করে এমন একটি আইন প্রনয়ন করা যা মানুষের বাক স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখবে এবং নিরীহ মানুষদের হয়রানি করবেনা বরং প্রকৃত অপরাধীদেরই শাস্তি নিশ্চিত করবে।