অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে বিভিন্নভাবে হত্যার চেষ্টা করছে এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। কারাগারেও এমন কোনো নির্যাতন নেই যা সরকার তার ওপর চালায় নি। মাহমুদুর রহমানের সেই আশঙ্কা রোববার কুষ্টিয়ার আদালত ভবনে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ছাত্রলীগের আক্রমণের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়াই ছিল তাদের টার্গেট। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে তিনি বেঁচে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪টি কারণে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন মাহমুদুর রহমানের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
প্রথমত: শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের অর্থপাচার নিয়ে মাহমুদুর রহমান একাধিকবার মুখ খুলেছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে শেখ হাসিনা জানতে পেরেছেন জয়ের অর্থ পাচারের সকল ডকুমেন্ট মাহমুদুর রহমানের কাছে আছে। এটা থেকে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয় মাহমুদুর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ।
দ্বিতীয়ত: ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে বসে যখন গণজাগরণের নামে সারাদেশে ধ্বংস লীলা চালিয়েছিল তখন মাহমুদুর রহমান আমারদেশ পত্রিকায় রিপোর্ট করেছিলেন যে, ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। আর শেখ হাসিনা যখন প্রতিনিয়ত কথিত উন্নয়নের ঢোল পিটাতেন তখন মাহমুদুর রহমান একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন যে, ‘ টাকার পাহাড় গেল কোথায়’। তার এই প্রতিবেদনে সরকারের উচ্চমহলের লোকজনের দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছিল। এতে করে শেখ হাসিনাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
তৃতীয়ত: মাহমুদুর রহমানই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সরকারের সকল প্রকার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছেন। গুম, খুন, অপহরণ, লুটপাট, ভারতপ্রীতিসহ সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু, সরকার এসব কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না।
চতুর্থত: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় এমপি মাহবুব উল আলম হানিফও মাহমুদুর রহমানের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। ২০০৯ সালে হানিফকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করার পর দৈনিক আমারদেশ পত্রিকা একটি রিপোর্ট করেছিল, ‘হানিফ সন্ত্রাসীদেরও গডফাদার’ শিরোনামে। ওই রিপোর্টের পর থেকেই মাহমুদুর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ হানিফ।
রোববার আদালত চত্বরে মাহমুদুর রহমানের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হানিফের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। এমনকি হামলায় যাতে কোনো প্রকার বাধা দেয়া না হয় সেজন্য ওসি এবং এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন হানিফ। এমনকি সর্বশেষ হানিফের কড়া নির্দেশেই মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তার কথা বলে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার সুযোগ করে দেন।
এমনকি একজন পুলিশ সদস্যকে নীরবে বলতে শোনা গেছে যে, আমাদের কিছু করার নেই। সবই হচ্ছে ওপরের নির্দেশে। আমরা চাইলেও তাদেরকে দমন করতে পারবো না।