অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের বিপরীতে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে ছিন্নমূল হিসেবে পরিচিত এমন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা মিলে এ ঐক্য গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে তারা ইতিমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছেন। আর সরকার বিরোধী একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ থেকে জানা গেছে, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাসদ সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ বিএনপির সঙ্গে মিলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রধান অন্তরায় হলো ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। তাদের অভিযোগ জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী। এই দলের নেতাদের সঙ্গে তারা বসতে পারবে না। তাই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে তারা জামায়াতকে জোট থেকে সরিয়ে দিতেও বিএনপিকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে। এনিয়ে তারা প্রকাশ্যে বক্তব্য-বিবৃতিও দিচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতকে বাদ দিয়ে তারা যে জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছেন সেটা কতটুকু সফল হবে? তাদের এই জাতীয় ঐক্য গঠন নিয়ে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও। তাদের এই সন্দেহ প্রকাশের কিছু কারণও রয়েছে।
দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে বঙ্গভবনে একটি সংলাপ হয়েছিল। সব দলকে সেই সংলাপে আমন্ত্রণ জানালেও জামায়াতকে ডাকা হয়নি। এমনকি খালেদা জিয়াকে ২০ দলের অন্যান্য নেতাদের নিয়ে সংলাপে গেলেও বঙ্গভবনের আপত্তির কারণে জামায়াতকে বাদ দেন। পরবর্তীতে দেখা গেছে এই সংলাপের ফলাফল ছিল শূন্য।
এরপর নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন সেখানেও জামায়াতকে রাখা হয়নি। জামায়াত ছাড়া সবাই তাদের মতামত দিয়েছেন। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি কারো মতামতকেই গ্রহণ করেননি। এখানেও সংলাপ ছিল ফলশূন্য।
এরপরও জামায়াতকে বাদ দিয়ে আরেকটি সংলাপ করেছে নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তারা সকল দলের ও সুশীল সমাজের লোকদের মতামত গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে কারো পরামর্শই কাজে লাগাননি নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া ২০০৬ সালেও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে জামায়াতকে বাদ দিয়ে সংসদ ভবনে সংলাপ করেছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল জলিল ও আব্দুল মান্নান ভুইয়া। তাদের এই সংলাপের পরই ২৮ অক্টোবর পল্টনে হত্যাকা- সহ সারাদেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু বিপরীত দিকে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন করে বিএনপি সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। বিএনপির পতন আন্দোলনে রাজপথে জামায়াতের ভুমিকা ছিল মুখ্য। এরপর ২০০১ সালে যে আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছিল সেটাতেও মুখ্য ভুমিকা ছিল জামায়াতের। আর এসব ঐক্য ও আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জাতীয় স্বার্থ। তাই সেই সব আন্দোলন সফল হয়েছে।
অতীতের বিশ্লেষণ থেকে মনে হয়, এখন ছিন্নমূল কয়েকটি রাজনৈতিক দল জামায়াতকে বাদ দিয়ে যে ঐক্যের চেষ্টা করছে সেটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, তারা এক হলেও মাঠে ঘাটে তাদের কোনো নেতাকর্মী ও ভোট নেই। বাংলাদেশের কোথাও থেকে তাদের একজন এমপিও নির্বাচিত হতে পারবে না। সেজন্য বিএনপির সঙ্গে মিলে তারা ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাচ্ছে বলেই মনে করছেন সচেতন মানুষ।