অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দক্ষিন এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রভাব ও সম্পৃক্ততা বাড়ছে। আর এ প্রেক্ষিতে চীনকে ঠেকানোর জন্য ভারত একটি ব্যপক এবং ত্রিমাত্রিক কৌশল প্রনয়ন করছে। এর মাধ্যমে তারা প্রথমত বেইজিং এর কার্যক্রমগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করবে, দ্বিতীয়ত নিজেদের জাতীয় প্রকল্প, স্বার্থ ও দায়বদ্ধতাগুলোকে সামাল দেবে এবং তৃতীয়ত প্রতিবেশী দেশগুলোকে চীনের সাথে সর্ম্পক জোরদার করার ব্যপারে নানা ধরনের নেতিবাচক ধারনা প্রদান করবে।
সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রতিবেশী দেশগুলোতে কর্মরত ভারতীয় কুটনৈতিকদেরকে নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন এবং উপরোক্ত কৌশলগুলোর আলোকেই সেখানে বেশ কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে। সুষমা স্বরাজ ছাড়াও সেই বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, পররাষ্ট্র সচিব ভিজয় গোখালে, চীনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বাওয়ালে, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে কর্মরত নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতগন যার মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়া, আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার, নেপালে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মানজিভ সিং, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হার্ষাবর্ধন শ্রিংলা, শ্রীলংকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তারাঞ্জিত সিং, মালদ্বীপে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আখিলেশ মিশ্র এবং ভুটানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জয়দীপ সরকার। সেই সাথে মরিশাসে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার অভয় ঠাকুর এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্রিও এই সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্য দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠকে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। জানা গেছে, বেইজিং এই দেশগুলোতে কিভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের কুটনৈতিকগন সে বিষয়ে সুষমা স্বরাজকে ধারনা প্রদান করেন।
বৈঠকে যে বিষয়গুলো বেশী গুরুত্ব পায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীনের সাথে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বানিজ্যিক সম্পর্ক, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ বড় অংকের যে ঋন নিচ্ছে সেটা নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কেননা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দৃশ্যত ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখলেও আড়ালে তারা চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও লেনদেন বৃদ্ধি করছেন।
পাকিস্তানেও চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বেড়েছে। আফগানিস্তানে চীনের সম্পৃক্ততা এখনো কম কিন্তু সেখানে চীন হাত দিয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে আফগানিস্তানে চীনের প্রভাব ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। নেপালের সাথে আগে থেকেই চীনের সম্পর্ক ভাল। সর্বশেষ নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির চীন সফরের পর নতুন করে কোন চুক্তি না হলেও সর্ম্পক যে আরো জোরদার হয়েছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
মালদ্বীপের প্রশাসন যেভাবে সাম্প্রতিককালে ভারতের প্রভাব কমাতে চেষ্টা করছে এবং চীন যেভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে বিশেষ করে যেভাবে স্থানীয় বিমানবন্দর, ব্রীজ ও বন্দর নির্মানে চীন সাহায্য করছে সেটা নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সকলের কথা শুনে সুষমা স্বরাজ জানান, এত কিছুর পরেও ভারত চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক বজায় রেখে চলবে। তবে যেভাবে চীন এসব দেশের কার্যক্রমে নিজেদের অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে সে ব্যপারে এসব দেশকে ভারতের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হবে। চীনের প্রভাবের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়েও তাদেরকে সচেতন করা হবে।