কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থতার ভান করছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার দুর্নীতির কাহিনী আছে। অসুস্থতার ভান করে কোর্টে হাজিরা দেয় না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবে। সে জন্যই হাজিরা দেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।
শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এভাবেই বক্তব্য দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১৩ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অন্যতম আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। এরপর বিচারক কয়েকটি তারিখ রাখলেও খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়নি। খালেদা জিয়ার এই অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে ওই সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তারিখ নির্ধারণ হলেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্টরা বাংলাদেশে আসবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, অসুখ তো তার (খালেদা জিয়া) আছেই। হার্টের অপারেশন করে আসছে, অনেক কিছু করে আসছে। ক্ষমতায় থাকতে আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা করে আসছে, সৌদিতে চিকিৎসা… আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, কিন্তু কোর্টে হাজিরা দিতে পারবে না, এমন তো অবস্থা না। কিন্তু সেটা করছে। কেন? কারণ, আমেরিকার এফবিআইয়ের লোকজন সাক্ষী দেয়ার জন্য বসে আছে। তারিখ পেলেই তারা চলে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, শাস্তি হয়েছে, জেলে গেছে। এখানে তো আমাদের কোনো দায় নেই। ১০ বছর ধরে মামলা চলেছে। বিএনপির যারা আইনজীবী… এত জাঁদরেল-জাঁদরেল আইনজীবী, তারা কী করল? তারা তো ব্যর্থ হয়েছে। খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে নাই, এটা তো তারা প্রমাণ করতে পারে নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে কেউ এতিমের টাকা চুরি করে খেতে পারে? এটা কেউ পারে না। অথচ এতিমখানার জন্য টাকা এনে, সেই টাকা কীভাবে নয়ছয় করেছে, আপনারা সেটা দেখেছেন।
বর্ধিত সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বিশ্ব সমর্থন অর্জন করেছি। এই সমর্থন নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য ভোট চাইতে এখন থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে। মানুষ কিন্তু ভুলে যায় এ জন্য আমাদের উন্নয়ন দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, তাদের কাছে বারবার যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। গ্রামের অর্থনীতি আজ উন্নত হয়েছে এবং জনগণের আয় বাড়ায় তারা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে পারছে- এ কথাগুলো সবাইকে বলতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যাকে নৌকা দেয়া হবে, তার পক্ষে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নৌকা যেন না হারে। একটি সিটে না জিতলে কী হবে- এমন মনোবৃত্তি যেন কারও মধ্যে না থাকে। একটি আসনও হারানো যাবে না, সবাইকে এই মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করা মানে শুধু নিজের উন্নয়ন করা নয়, দেশ ও দশের জন্য কাজ করাই এই দলের মূল উদ্দেশ্য।
সরকারপ্রধান বলেন, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচন কঠিন হবে। নির্বাচনে জয়ী না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেমে যাবে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যেসব কর্মসূচি চলছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নয়নকাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে স্থানীয়ভাবে দলের জন্য কাজ করতে হবে।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নেয়া হবে। তারপরও যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হবে, তার পক্ষেই সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের তৃতীয় এই বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন।
দলের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
সূত্র: যুগান্তর