একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দাবি আদায়ে বাধ্য করতে ‘শর্ট টাইম’ আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বুধবার (২৭ জুন) বিকালে দুই ঘণ্টার বৈঠকে এ বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া জোটের বৈঠকে আসন বন্টনের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়, ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হলেও ক্রমাগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সম্প্রতি বিএনপির তিন নেতার ভারতসফর নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। জোটের বৈঠকে অংশ নেওয়া শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০-দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচনের আগে সরকারকে দাবি মানাতে কার্যকর আন্দোলনের কোনও বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বাধা রয়েছে। বিশেষ করে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে ‘শর্ট টাইম বা স্বল্পসময়’কেই এগিয়ে রাখছেন জোটের নেতারা। তবে এই কর্মসূচির দিনক্ষণ ঠিক করতে আরও আলোচনা করবে বিএনপি-জোট।
বুধবার বিকাল চারটায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অনেক দিন পর জোটের বৈঠকে দিলখোলা আলোচনা করেছেন নেতারা।
জানা যায়, বৈঠকে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের দু’টি বিষয়ে কথা বলেন। একটি হচ্ছে, আগামী দিনের আন্দোলন গড়ে তোলা এবং তা কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে স্বল্প সময় বেছে নেওয়া। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। তার বক্তব্যের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এই দু’টি বিষয়ে একমত হন। এ বিষয়ে পরে সময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।
পরে এ প্রসঙ্গে আহমদ আবদুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচি কখন দেওয়া হবে, ঈদের পর নাকি ঈদের আগে-এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
আরও জানা যায়, বৈঠকে আসনের বিষয়ে কথা তোলেন এলডিপি’র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। এ বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আকারে-ইঙ্গিতে আলোচনায় এসেছে, অনেকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো না করে কাজটি যেন গুছিয়ে করা যায়। এ বিষয়গুলো এখনই ফায়সালা করা দরকার। যখন ফায়সালা করতে চাইবেন, তখন ঝামেলা হতে পারে। ফলে আসনের ব্যাপারে আলোচনাগুলো হওয়া দরকার।’
জোটের শরিক নেতারা জানান, বৈঠকে গাজীপুরসহ আসন্ন তিন সিটিতে কেন বিএনপি অংশ নিচ্ছে এর একটি ব্যাখ্যা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনে যাওয়া উচিৎ এবং এতে করে নির্বাচনি পুরো প্রক্রিয়া বিশ্ববাসী দেখছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেলে বরং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। এসময় একাধিক নেতা নির্বাচন থেকে বিরত থাকার কথা তুললেও জোটের বেশিরভাগ দলই নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বৈঠকে বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচনের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচনের পথেই থাকতে হবে। যদিও আমরা জানি, গাজীপুর সিটির মতো আগামী তিনটি সিটিতেও একইরকম ভোট হবে।’
বৈঠকের ব্যাপারে আরও জানা যায়, এই মাসের শুরুর দিকে তিন বিএনপি নেতার ভারত সফর নিয়েও জোটের নেতাদের সামনে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘যেহেতু বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় যেতে চায়; সেক্ষেত্রে এ অঞ্চলের যারা ক্ষমতাধর, বিশেষ করে ভারত ও চীনের সঙ্গে ওয়ার্কিং সম্পর্ক রাখতে হবে। এমনকী যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ তুরস্কের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে হবে।’ এছাড়া ভারতের থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটেছে বলে জানান দলটির মহাসচিব।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন ভারত সফরে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ তিননেতা। তারা পাঁচ দিন দিল্লিতে অবস্থান করেন।