অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ সম্প্রতি স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছে বলে সরকার খুব বড় গলায় দাবী করছে। সরকারি দলের নেতাকর্মী বা মন্ত্রী এমপিরা তো সে আনন্দে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেনই এমনকি রাস্তাঘাটে পোস্টার প্লাকার্ডেও একই ভাষায় উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা সম্পর্কিত প্রচারনা। মোদ্দা কথা, উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হওয়ার এই বিষয়টিই বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে তারা দাবী করছে এবং এটাকে দিয়েই তারা তাদের পেছনের সব অন্যায়, জুলুম ও নিপীড়নকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু সরকারের সেই একপেশে প্রচারনায় এবার বাধ সাধলো ভারত। সম্প্রতি ভারতের একটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক পত্রিকা দাবী করেছে, স্বল্পন্নোত দেশ থেকে মধ্যম সারির উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের এই যাত্রার পেছনে মুল অবদানটাই নাকি ভারতের।
ভারতের ইকোনোমিক টাইমস পত্রিকাটি এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের বাণিজ্যে ভারতের বিপুল পরিমান বিনিয়োগ, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের স্বল্প মুল্যে এলসি খোলার সুবিধা দেয়া, বাংলাদেশের সরকারকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের অনুদান ও ঋন প্রদান, বাংলাদেশী পন্যের ভারতের বাজারে প্রবেশের সুবিধা এবং সহজ ভিসা প্রক্রিয়ার কারনেই বাংলাদেশর পক্ষে এত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে ভারতের অর্থনৈতিক অবদান কতটুকু সেটার কোন পরিসংখ্যান অবশ্য প্রতিবেদনটিতে পাওয়া যায়নি। যদিও সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে আসলে দেশটির সরকার নয় বরং বেসরকারি খাতের সফলতাই আসলে মূল কারন। বিশেষ করে বাংলাদেশের কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক, উদ্যেক্তা আর শ্রমজীবি মানুষগুলো বিগত কয়েক দশক ধরে যে পরিশ্রম করে যাচ্ছে তারই ফলশ্রুতিতেই আসলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হয়েছে।
ইকোনোমিক টাইমসের বিশ্লেষনধর্মী প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “India’s key contribution to Bangladesh’s graduation from LDC status”। এতে বাংলাদেশের রেকর্ড পরিমান ৭.২৮ শতাংশ জিডিপিরও প্রশংসা করা হয়। জানানো হয় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ। আউটসোর্সিং থেকে বাংলাদেশ এখন যা আয় করে তা বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমান। তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ চাল উৎপাদক দেশ, পঞ্চম শীর্ষ মিঠা পানির মাছ উৎপাদক দেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে যে পরিমান জনশক্তি বাইরে রফতানি হয় সেটাও বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম। বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রাপ্তিতেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অস্টম শীর্ষ দেশ।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমশই শক্তিশালী হচ্ছে এবং ভারতের উদিয়মান অর্থনীতির ফায়দাও বাংলাদেশ বিপুলভাবে হাসিল করতে চাইছে। বিশেষ করে উত্তর পূর্ব ভারতে এবং পশ্চিমবাংলায় বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন করে বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে।
যদিও প্রতিবেদনে আশংকা প্রকাশ করে বলা হয় যে এত কিছুর পরও বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমান এখনও ভারতের তুলনায় অনেক বেশী। চীনের সাথে বছরে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমান ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অথচ ভারত এত নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হওয়া স্বত্বেও ভারতের সাথে বাণিজ্যের পরিমান এখনও ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভারত সন্তুষ্ট কেননা এই দেশটি যত স্থিতিশীল ও উন্নয়নের স্রোতে থাকবে ভারতের নিরাপত্তা ততটাই সুনিশ্চিত হবে। আর সেকারনেই বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশ বা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের জন্য হুমকি এমন গোষ্ঠীগুলোকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিচ্ছে- এ ধরনের অভিযোগ ভারতের দিক থেকে কম তোলা হচ্ছে। কেননা ভারত মনে করে যেভাবে বর্তমান বাংলাদেশ প্রশাসন জংগী দমন করেছে এবং ভারতের জন্য সম্ভাব্য হুমকিগুলোকে নস্যাৎ করে দিয়েছে, সেটা অন্য কোন দল হলে সম্ভব হতোনা। তাই এ সরকারের যাবতীয় কর্মকান্ডে ভারত আগাগোাড়াই নগ্নভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।