মাসুম খলিলী
পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচনে কি ফলাফল দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে এবার। জনমত জরিপ অনুসারে নওয়াজপন্থী মুসলিম লীগের সমর্থন সবচেয়ে বেশি। এর পরই রয়েছে ইমরান খানের পিটিআই। তার পরে বিলওয়াল জারদারির পিপিপির অবস্থান। এর মধ্যে এক সময়ের সাড়া জাগানো ইসলামপন্থী দলগুলোর জোট এমএমএ (মোত্তাহিদা মজলিসে আমল ) নতুন করে সংগঠিত হয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে নেমেছে। নির্বাচনে নতুন ইস্যু হিসাবে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ পাঞ্জাব নতুন প্রদেশ গঠনের বিষয়টি। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতির নির্বাচন কেন্দ্রীক গন্তব্য কোন পথে সেটি নানা ধরনের অনুমান ও বিশ্লেষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিপ স্টেটের সাথে সংঘাতে নওয়াজের বিদায়?
পাকিস্তানে মুসলিম লীগ নওয়াজ শরীফ (নওয়াজ লীগ হিসাবে বেশি পরিচিত) এখনো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দল বলেই বিভিন্ন জরিপে উঠে আসছে। দুর্নীতির দায়ে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অযোগ্য ঘোষিত হবার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো নওয়াজ শরীফ এই দলটি গঠন করেছিলেন জেনারেল জিয়াউল হকের সেনা শাসনামলে তারই পৃষ্ঠপোষকতায়। এর পর নানা ধরনের উত্তান পতন গেছে নওয়াজ শরীফের রাজনৈতিক জীবনে। পাকিস্তানে তিনি তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিন বারই মেয়াদ পূর্তির আগে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু জনগণের মধ্যে বিশেষত দেশটির বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবে মুসলিম লীগ গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হবার কারণে তিনি বার বার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন। কিন্তু প্রতি বারই তিনি ‘ডিপ স্টেট’ হিসাবে পরিচিত সেনা প্রতিষ্ঠান ও বিচার বিভাগের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।
নওয়াজ শরীফ সরকারের শীর্ষ পদে বসে রাষ্ট্রের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি চান নিজের মতো করে ভারতের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ এবং কাশ্মীর প্রশ্নে নীতি ঠিক করতে। কিন্তু এ দুটি বিষয় যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অস্থিত্বের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত একটি এজেন্ডা সেটি তিনি সেভাবে উপলব্ধি করতে চাননি। তিনি নরেন্দ্র মোদির আনুকুল্যপ্রাপ্ত ভারতের প্রভাবশালী শিল্পগ্রুপগুলোর সাথে বাণিজ্য সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়েছেন। ডিপ স্টেট এটাকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক বিবেচনা করেছে। এসব করতে গিয়ে তিনি পানামা পোপার্স কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন।
নির্বাচনের আগেই বিচারের মুখোমখি হয়ে চূড়ান্তভাবে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারেন নওয়াজ। বাস্তবতার সাথে আপোষ না করে তিনি এখনো লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন। মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসি হামলার জন্য লোক জন পাক ভূমি থেকে গেছে এমন আত্মঘাতি ইঙ্গিত দিতেও তিনি পিছপা হননি। এতে তার গ্রহণযোগ্যতা সব ক্ষেত্রেই প্রশ্নের মধ্যে পড়েছে বলে মনে হয়। আর যে চ্যালেঞ্জের পথে তিনি এগুচ্ছেন তাতে কারাগার অথবা নির্বাসনই সম্ভবত তার পরবর্তী ঠিকানা হতে যাচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থায়ও তার দল ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনে সর্বাধিক আসনে জয়ী হবার পথে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তবে এ যাত্রায় নওয়াজের চেয়েও দলের কান্ডারি হিসাবে এগিয়ে আসছেন তার ভাই শাহবাজ শরীফ।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মুসলিম লীগের নেতুত্ব দিচ্ছেন শাহবাজ শরীফ। পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ বড় ভাইয়ের মতো সংঘাত বাধাতে চান না প্রভাবশালী পক্ষগুলোর সাথে। সেনা প্রতিষ্ঠানের সাথে বরাবরই তার ভালো সম্পর্ক। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ক্ষেত্রেও তিনি ঠান্ডা মাথার মানুষ। ফলে তার নেতৃত্বে মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে সরকার গঠন করলে ডিপ স্টেটের আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। তবে নওয়াজের স্ত্রী সন্তানরা সেটি চান বলে মনে হয় না। যার কারণে নওয়াজের শূন্য আসনের উপ নির্বাচনে তিনি প্রার্থি হতে পারেননি।
সম্ভবত পাকিস্তানে মুসলিম লীগের আবেদন থাকলেও নওয়াজ শরীফ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এখন শাহবাজ শরীফকে সেনা প্রতিষ্ঠান চাইলে তিনি পরের সরকারে নেতৃত্ব দিতে পারেন। তা না হলে খাকান আব্বাসির মতো নওয়াজ পরিবারের বাইরের কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিতে হবে। আর মুসলিম লীগ যে পরের নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে সংখ্যাগরিষ্টতা পাচ্ছে এমনটিও বলা যায় না।
জরিপে এগিয়ে মুসলিম লীগ, এরপর পিটিআই
গ্যালপ পাকিস্তানের সর্বশেষ জনমত জরীপ অনুসারে জাতীয়ভাবে ৩৮ শতাংশ ভোটার নওয়াজ মুসলিম লীগকে সমর্থন করছে। এর বিপরীতে পিটিআই এর সমর্থন ২৫ শতাংশ এবং পিপিপির সমর্থন ১৫ শতাংশ। ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় এখনকার নওয়াজ লীগের সমর্থন ৫ শতাংশ এবং ইমরানের পিটিআইয়ের সমর্থন ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে পিপিপির সমর্থন আগে যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। ইসলামি দলগুলোর জোট এমএমএ’’র সমর্থন কত তা এই জরিপে উল্লেখ করা হয়নি। জুনের শেষ দিকের যে কোন জরিপে এমএম্এ’র বিষয়টি চলে এলে নওয়াজ লীগ ও পিটিআই দুই দলের সমর্থন কিছুটা কম দেখা যেতে পারে।
জরিপ অনুসারে প্রদেশ হিসাবে পাঞ্জাবে মুসলিম লীগ, সিন্ধুতে পিপিপি, খায়বার পাখতুন খোয়ায় পিটিআই এবং বেলুচিস্তানে এমএমএ’র সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাঞ্জাবে মুসলিম লীগের আসন সংখ্যা আগের চেয়ে কমতে পারে। পূনর্গঠিত এমএমএ নওয়াজ লীগ ও পিটিআই দুটো দল থেকেই কিছু আসন নিয়ে নিতে পারে। দক্ষিণ পাঞ্জাবে মুসলিম লীগের চাইতে পিটিআইয়ের ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইমরান খানের সামনে ক্ষমতার হাতছানি?
অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ইমরান খানের সামনে ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনা এবার সবচেয়ে বেশি। দুনিয়া নিউজের ১৪ জুন প্রকাশিত জরিপ অনুসারে পাঞ্জাবে নওয়াজ লীগের ৫২ শতাংশ সমর্থনের বিপরীতে ইমরানের সমর্থন এখন ৩৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দু’দলের সমর্থন আগের বারের নির্বাচনের তুলনায় ১১ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগের নভেম্বরে গ্যালপ পাকিস্তানের জরীপের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় ৭ মাসে নওয়াজ লীগের সমর্থন যেখানে ২ শতাংশ বেড়েছে সেখানে ইমরান লীগের সমর্থন বেড়েছে ৮ শতাংশ। দুনিয়া নিউজ দক্ষিণ পাঞ্জাবে আলাদা জরিপ করে দেখিয়েছে সেখানে পিটিআই এর সমর্থন যেখানে ৫০ শতাংশ সেখানে নওয়াজ লীগের সমর্থন ৩৭ শতাংশ।
খায়বার পাখতুন খোয়ায় ইমরান আগের বার ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছিলেন। এবার তার দলের সমর্থন বেড়ে ৫৪ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে দুনিয়া নিউজের জরিপে বলা হয়েছে। অথচ এই সময়ে নওয়াজ লীগের সমর্থন আগে যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। আগের বছর নভেম্বরের তুলনায় এই জুনে পিটিআইয়ের সমর্থন ৭ শতাংশ বেড়েছে।
খায়বার পাখতুন খোয়ায় ইমরানের সরকার খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও এই অঞ্চলের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন বলে মনে হয়। যার ফলে বিভিন্ন জরীপে ৫৯ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ পিটিআই কোয়ালিশন সরকারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ইমরান খানের সাথে ডিপ স্টেটের সম্পর্ক কেমন এই প্রশ্ন মাঝে মধ্যেই উঠতে দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন, ইমরানের রাজনীতিতে আসার পেছনে সেনা প্রতিষ্ঠানের উৎসাহ রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তার পেছনে সেনা প্রতিষ্ঠানের মদদ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও এটি ইমরান অথবা সেনা প্রতিষ্ঠান কোন পক্ষ থেকেই স্বীকার করা হয় না।
ইমরানের ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব অনেক সময় রাজনীতিতে দেখা যায়। জেমিমা গোল্ডস্মীথ ছিলেন ইমরানের প্রথম স্ত্রী। বৃটিশ ইহুদি ধনকুবের গোল্ডস্মীথ কন্যা জেমিমা ইমরানকে বিয়ের আগে ইসলাম গ্রহন করেন। তার গর্ভে ইমরানের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ৯ বছরের মতো তারা সংসার করার পর পাকিস্তানের সংস্কৃতি ও পারিবারিক মূল্যবোধের সাথে মানিয়ে উঠতে না পারার কারণে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই বোঝাপড়ার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হয়। এর পর ইমরান দ্বিতীয় বিয়ে করেন এক পাকিস্তানী-বৃটিশ সাংবাদিক রেহাম খানকে। মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী এই বিয়েটির পরিসমাপ্তি ঘটে তিক্ততার মধ্য দিয়ে। ইমরান খানের এই সাবেক স্ত্রী ইমরানের ব্যক্তিগত জীবনের উপর এমন এক বই লিখেছেন যার কালো ছায়া এবারের নির্বাচনে পড়তে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
ইমরান তৃতীয় বিয়ে করেছেন কয়েক সন্তানের জননি ও তার অধ্যাত্মিক উপদেষ্টা বুশরা মানিকা খানকে। ইমরানের দুই তৃতীয়াংশের কাছাকাছি বয়সের এই আপাতমস্তক বোরখায় ডাকা রমণীকে বিয়ে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ইমরানকে বিয়ে করতে সাবেক স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ গ্রহণ করেন এই পাঠান মহিলা। বুশরা ও ইমরানের পরিবারের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের মধ্যে অনেক তফাৎ থাকায় এই বিয়ে কতটা স্থায়ী হবে সেই প্রশ্ন উঠে। জবাবে ইমরান বলেন, এই তৃতীয় ইনিংসেই তার শেষ। এর পর নতুন কোন ইনিংসে নামবেন না তিনি। এসব ব্যক্তিগত বিষয় ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হবার পথে কতটা বাধা হবে সেটি নিশ্চিত নয়। তবে ডিপ স্টেট চাইলে ইমরানের এককভাবে অথবা পিপিপি বা অন্য কোন দলের সাথে জোট করে সরকারে যাওয়া অসম্ভব নয়।
পিপিপি: সিন্ধুতেই বন্দী
তিন বারের বেশি পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকা পিপিপি জারদারি পর্ব শেষ হবার পর আর কোনভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিকে পিপিপির চেয়ারম্যান করে পেছন থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন আসিফ জারদারি। তবে এবার পিপিপির সাফল্য সিন্ধুর বাইরে যাবে এমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জাতীয়ভাবে তাদের প্রাপ্ত ভোট আগের বারের ১৫ শতাংশ অতিক্রম করবে না বলেই মনে হচ্ছে। তবে সিন্দুতে তারা সর্বশেষ জরিপ অনুসারে ৫৩ ভাগ ভোট পাবার সম্ভাবনা রয়েছে যা আগের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
এখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জুলফিকার আলী ভুট্টোর জমিদারি প্রদেশ সিন্ধে আবারও সরকার গঠন করবে পিপিপি। কেন্দ্রে কেবল কোন কোয়ালিশন হলে তাতে পিপিপিকে সরকারে দেখা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জারদারির যে দুর্নীতিগ্রস্ততা ও অযোগ্যতার ইমেজ তৈরি হয়েছিল তা কোনভাবেই কাটানো যাচ্ছে না। তাছাড়া লারকানার ভুট্টো পরিবারের সবাই তাকে পছন্দ করে এমনও নয়।
এমএমএ কি আগের ক্যারিশমা দেখাতে পারবে?
২০০২ সালে নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সব ইসলামি দল মিলে গঠন করেছিলেন এমএমএ । জামায়াতে ইসলামীর আমীর কাজি হোসাইন আহমদ এবং জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মওলানা ফজলুর রহমান ছিলেন এমএমএ’র প্রধান দুই নেতা। সে সময় দলটি ফেড়ারেল সংসদে ৬০টি আসন লাভ করে। আর উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সরকার গঠন করে। এমএমএ’র প্রাদেশিক সরকার খুব বেশি সাফল্য দেখাতে পেরেছিল এমনটি নয়। আর পরের নির্বাচনে সেই জোট অব্যাহত থাকেনি। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন বয়কট করে। আর মওলানা ফজলুর রহমান নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।
এর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাবার পর ২০১৭ সালে এমএমএ জোট পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। জোটের চেয়ারম্যান হন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রধান মওলানা ফজলুর রহমান। সেক্রেটারি জেনারেল হন জামায়াতে ইসলামী লিয়াকত বালুচ। এই জোটে দেউবন্দী বেরেলভি আহলে হাদিস এবং শিয়া ইসলামী দলগুলো আবার যুক্ত হয়। তবে এমএমএ’র অন্যতম প্রধান দল মাওলানা সামিউল হকের জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এমএমএতে না এসে পিটিআইয়ের সাথে জোট করেছেন। আর ছোট খাট দুয়েকটি দল জোটের বাইরে রয়ে গেছে।
এর ফলে আগের বারের মতো এমএমএ’র তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভুত হওয়ার বিষয়টি বলা মুশকিল। অধিকাংশ জরিপে এমএমএকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে তাদের প্রতি জনসমর্থন কতটা রয়েছে সেটি বলা কঠিন। তবে বেলুচিস্তান এবং খায়বার পাখতুন খোয়ায় এই জোট ভালো করতে পারে। জোটটি নওয়াজ লীগ এবং পিটি্আই থেকে কিছু আসন ছিনিয়ে নিতে পারে। তবে আন্তর্জাতিকভবে ইসলামিস্টদের ক্ষমতার বাইরে রাখার নীতির কারণে তারা খুব ভালো করবে এমনটি আশা করা যায় না।
এছাড়া আগের বার পাকিস্তানে তীব্র আমেরিকা বিরোধি জনমত এমএমএ জোটকে অনেক দুর এগিয়ে দিয়েছিল। এবার সেই সেন্টিমেন্ট নেই। এছাড়া বিভিন্ন জঙ্গি কর্মকান্ডের জন্য পাকিস্তানের ইসলামী দলগুলোর প্রতি সমর্থনও কিছটা কমে গেছে বলে মনে হয়।তবে করাচি কেন্দ্রীক এমকিউএম দুর্বল হয়ে যাবার সুবিধা এমএমএ পেতে পারে। এর পরও তারা আগের বারে পাওয়া ৬০ আসনের অর্ধেকও ছুতে পারবে কিনা সংশয় রয়েছে।
কৌশলগত সমীকরণ
পাকিস্তানের রাজনীতি ও নির্বাচন দুটো ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের কৌশলগত সমীকরণের প্রভাব থাকে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পে চীনের বিপুল বিনিয়োগ থাকায় পাকিস্তানের রাজনীতির জন্য চীন একটি বড় ইস্যু। যদিও বেইজিং কোন সময় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথে যুক্ত হয় না। মুসলিম লীগ পিপিপি দুই দলের সাথে রয়েছে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। খায়বার পাখতুন খোয়ায় ইমরানের সরকার প্রথম দিকে অর্থনৈতিক করিডোরের বিরোধিতা করেছিল। পরে পিটিআই জোটের প্রাদেশিক সরকার এই প্রকল্পের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠে। এমএমএ জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামীর সাথেও রয়েছে চীনের বিশেষ যোগাযোগ। ফলে পাকিস্তানে আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে তাদের অবস্থান ইতিবাচক হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া এই প্রকল্পটিকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ডকট্রিনের একটি অংশ বলে মনে করা হয় বলে সেনা প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে বিপরীত কোন নীতি অনুমোদন করবে না। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশি ভারতের যতটা প্রভাব দেশটিতে রয়েছে সেটা দিয়ে সেক্যুলার শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার চেষ্টা হতে পারে। তবে নির্বাচনের ফলাফলে এর খুব বেশি প্রভাব থাকবে বলে মনে হয় না।