বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের বলার কিছু নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, ভিত্তিহীন মামলায় সরকার উচ্চ আদালতের মাধ্যমে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। বিচারিক আদালতে তাকে খালাস দেয়ায় সংশ্লিষ্ট বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার এক স্মরণ সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সভাটির আয়োজন করে নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ।
বিএনপি এতো বড় রাজনৈতিক দল, সেই দলে কি এমন একজন নেতা নেই যে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেই নেতা করতে হবে?- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত কিসের? আমাদের যিনি নেতা হয়েছেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছেন। এখানে তো আপনাদের (আওয়ামী লীগের) বলার কিছু নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত কোন মামলায়? যে মামলার কোনো ভিত্তি নেই, যে মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তাকে খালাস দেয়ায় ওই বিচারকের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) সব সাজাপ্রাপ্ত লোকদের নিয়ে মন্ত্রিসভায় বসিয়ে রেখেছেন। আপনাদের মামলাগুলো নিজেরা তুলে নিয়েছেন। একটাও মামলা রাখেননি, সব তুলে নিয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে (এস কে সিনহা) একটা রায় দেয়ার অপরাধে দেশ থেকে বের করে দিলেন। বলা হলো- উনার হাত নাকি অনেক লম্বা হয়ে গেছে। দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর এখন দুর্নীতির মামলা দেয়া হচ্ছে।’
‘কয়েকজনকে ডিঙিয়ে তাকে প্রধান বিচারপতি বানালেন। তখন সুবিধা ছিল যে, তিনি আপনাদের পক্ষে রায় দিচ্ছিলেন, তাই না? বিচার বিভাগকে শেষ করে দিচ্ছেন। এবারও একজনকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এই যদি করতে থাকেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায়?’ যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিম্ন আদালতের সমস্ত ক্ষমতা নিয়ে নেয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় ছাড়া কোনো বিচারপতির পোস্টিং, প্রোমোশন কিছুই হবে না। আপনাদের আইন মন্ত্রণালয়ের একজন বিশেষ কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া কারো বিচার এবং জামিন হয় না। এভাবে বিচার বিভাগকে, দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ করছেন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন। এই ভয়গুলো আমাদের দেখাচ্ছেন কেন? দেশে যদি ফিরে আসতে হয়, উনি আসবেন। যেদিন উনি দেশে ফিরে আসবেন, সেদিন দেখবেন কোটি কোটি মানুষ উনাকে বরণের জন্য বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হয়েছে।’
অক্টোবরে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকলেই তফসিল ঘোষণা করতে হয়। আপনারা ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছেন। এই দেশের মানুষ আপনাদের অধীনে নির্বাচন বিশ্বাস করে না। আপনারা সরকারে থাকবেন আর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তা এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না।’
খালেদা জিয়াকে জামিন না দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এরকম মামলায় আপিল করার সঙ্গে সঙ্গে জামিন হয়ে যায়, কিন্তু খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। অথচ আপনার (শেখ হাসিনা) মন্ত্রিপরিষদে তিনজন সাজাপ্রাপ্ত মন্ত্রী রয়েছে। একজনের ১৩ বছরের সাজা হয়েছে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, পিন্টুর স্ত্রী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসিমা আক্তার কল্পনা প্রমুখ।
সূত্র: পরিবর্তন