অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ছাত্রলীগের অব্যাহত নির্যাতন আর নিপীড়নে রংপুর মেডিকেল কলেজের শহীদ জিয়াউর রহমান হল সাধারণ ছাত্রদের কাছে এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে । ছাত্রলীগের এক প্রকার টর্চারসেলে পরিণত হয়েছে হলটি। গত কয়েকদিনে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থীকে নানা অযুহাতে পিটিয়ে আহত করলেও হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
জানা গেছে, শহীদ জিয়াউর রহমান হলটি বেশ কিছু দিন ধরেই ছাত্রলীগের নির্যাতনের সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলের সাধারণ ছাত্রদের মোবাইল, লেপটপ, টাকা-পয়সা লুট করা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদেরকে জোর করে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া, চাঁদা আদায়, সিনিয়রদের অহেতুক নিপীড়ন ইত্যাদি ছাত্রলীগের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে।
ছাত্রলীগের এসব নির্যাতন থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা ঐ হল ছেড়ে চলে আসতে শুরু করে। এ বছর মাত্র ২৫জন শিক্ষার্থী শহীদ জিয়া হলে উঠে বলে জানা গেছে। হলে শিক্ষার্থী না উঠায় ছাত্রলীগ আরো ব্যপরোয়া হয়ে উঠে। তারা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রতিশোধ নিতে নির্যাতন নিপীড়ন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে হলে উঠার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ জিয়া হলের একজন শিক্ষার্থী অ্যানালাইসিস বিডিকে জানান, প্রথম থেকে আমরা যারা হোস্টেলে ছিলাম, প্রতি সপ্তাহে প্রতি মাসে কারনে অকারনে বর্তমান রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ কমিটিকে চাঁদা দিয়ে আসতে হতো। কেউ চাঁদা দিতে অপারগ হলে তাকে গণরুমে(র্যাগরুম) নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা হতো।
ঐ শিক্ষার্থী আরো জানায়, প্রতি সপ্তাহে কারনে অকারনে র্যাগ দেয়া হতো। সিনিয়রদের কাজ, প্র্যাক্টিকেল খাতা, সিগারেট, খাবার নিয়ে আসার জন্য আমরা পড়াশোনার সময় পেতাম না। মিছিল মিটিং এ যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হতো। রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত গণরুমে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। আমরা বাধ্য হই হল ছাড়তে। কিন্তু থেমে থাকেনা আমাদের উপর এই নির্যাতন।
এ অবস্থায় ছাত্রলীগের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চাওয়া হলে শিক্ষকরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সরকার সমর্থকপক্ষ ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নিলেও বেশিরভাগ শিক্ষক ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দেয়ায় শিক্ষকরা কিছুই করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপত্তা হুমকীর মুখে পড়েছে। সবসময় ছাত্রলীগের নির্যাতনের ভয় নিয়েই তাদের দিন কাটছে।
জানা যায়, গত ২১ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগ অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থীর উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। ভয়ে হল ছেড়েও শিক্ষার্থীরা রেহাই পাচ্ছে না। হল ছাড়ার পর এবার তারা ক্লাসে যেতেও ভয় পাচ্ছে।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থীর মা জানান, ‘গত জানুয়ারির ১০ তারিখ থেকেই হলে শিক্ষার্থীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চলছে। শেষে বাধ্য হয়েছিলাম ছেলেকে হল থেকে বাইরে নিয়ে আসতে। আর এখন ওরা কলেজের মধ্যেই প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব করছে। ছেলে যখন ফোনে কান্নাকাটি করে এসব নির্যাতনের কথা জানালো এক ফোটা ঘুমাতে পারিনি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ওরা আঘাতে জর্জরিত করেছে। ভয়ে আজ ওরা ক্লাসেও যায়নি।’
নির্যাতনের শিকার আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, যারা রংপুরের স্থানীয় এবং যারা হল ছেড়ে চলে এসেছে এবং যারা আগে থেকে বাইরে বাসা নিয়ে থাকতো তাদের উপর কোন কারণ ছাড়া অকথ্য গালিগালাজ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। হলের বাইরে থাকলে জামায়াত শিবির এবং সন্ত্রাসী উপাধি দিয়ে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন রেখে বলেন, কলেজ প্রশাসন নীরব কেন? ছাত্রলীগের অত্যাচার আর নির্যাতনের ভয়ে কি আমরা কলেজে যেতে পারবো না?