অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বকশিবাজারের বিশেষ আদালত থেকে বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিনই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানানোর জন্য হাইকোর্ট এলাকায় জড়ো হন। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কদম ফোয়ারার কাছে আসলেই নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে তাকে এগিয়ে নিয়ে আসেন। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়া একটা স্বাভাবিক বিষয়।
দেখা গেছে, বেশ কয়েক দিন বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়া মাত্রই পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করেছে। এমনকি তাদের ওপর লাঠিপেটাও করেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মাঝে মধ্যে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
অন্যান্য দিনের মতো গত মঙ্গলবার বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য হাইকোর্টের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কদম ফোয়ারার কাছে আসার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তায় বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিনা উস্কানিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। আত্মরক্ষায় তারাও তখন ঘুরে দাড়ায়। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে প্রিজন ভ্যান থেকে তারা তাদের দুই কর্মীকে বের করে নিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর রাতেই পুলিশ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে শুরু হয় গণগ্রেফতার। এখন পর্যন্ত বিএনপির ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্দেশেই পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা বিএনপির পুরনো অভ্যাস।
আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হামলাকারীরা কেউ বিএনপির লোক নয়। তাদেরকে আমরা চিনি না। সরকার নিজেদের লোক দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অতীতে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাই করার ঘটনা ঘটেছে। শুধু ২০১৭ সালেই এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদকাসক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করার পুলিশকে মারধর করে দুই নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে পুলিশের হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে এনেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। রাঙামাটিতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে এনেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সিলেটে খুনের আসামিকে ছিনিয়ে এনেছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক ৩ কর্মীকে ছিনিয়ে এনেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামে একটি হোটেলে নারীসহ এক ছাত্রলীগ নেতা আটক হওয়ার পর থানায় হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে এনেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়েও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আটক কর্মীকে ছিনিয়ে এনেছে ছাত্রলীগ।
সর্বশেষ বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জে জুয়ার আসর থেকে আটক করা চার আসামিকে ছিনিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। এসময় তারা পুলিশের ওপর হামলাও চালিয়েছে।
জানা গেছে, জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি বাজারে বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় এএসআই এমদাদ ও ওয়ালী উল্লাহসহ চার পুলিশ আহত হন। এ ঘটনায় যেন মামলা দায়ের করা না হয় সেজন্য পুলিশকে নানাভাবে ওই নেতারা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার পর রাতভর অভিযান চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া চার জুয়াড়ির মধ্যে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় দুই জুয়াড়িকে আটক করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় উদ্ধার জুয়াড়ি ইদ্রিস আলী (৫১) ও জসিম উদ্দিনকে (৫০) আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতা ভিপি আব্দুল হাকিমের নির্দেশে জুয়াড়িরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আটক চার জুয়াড়িকে ছিনিয়ে নেয়।
এসব ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় পুলিশের ওপর হামলা আওয়মী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগই চালাচ্ছে।