মাসুদ মজুমদার
ট্রাম্পের অভিবাসী আইন কঠোর করতে নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসের জন্ম দেয়া হয়নি তো? এ প্রশ্ন ওঠার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে দেশে রাষ্টীয় সন্ত্রাস যেভাবে কালো ছায়া ফেলেছে- তাতে জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্রপন্থী খোঁজার চেয়ে এর উৎস সন্ধান বেশি জরুরি। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ জন্ম নিচ্ছে, না জন্ম দেয়া হচ্ছে- এ প্রশ্ন নতুন করে উঠেছে। নিউ ইয়র্কে বোমা হামলায় আকায়েদ কিভাবে জড়াল, যে মাত্র সাত বছর আগে সন্দ্বীপ থেকে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছিল।
আমাদের দেশে গুম, অপহরণের কান্না থামছে না। বন্ধ হচ্ছে না বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর ঘটনা। এ ক্ষেত্রে অনেক ঘটনার রাজনৈতিক রূপ স্পষ্ট। তারপরও অনেক নৃশংস হামলার অতীত বিভীষিকা ভুলে পুরো জাতি শোককে শক্তিতে রূপান্তরের নতুন শপথ নিলো। অথচ দিনের পর দিন বড় বড় চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তই শেষ হচ্ছে না। নেপথ্যের শক্তি কিংবা দেশী-বিদেশী গডফাদার কারা, তারাও থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বলা হচ্ছে, ক’মাসের প্রস্তুতিতে ক’জন উগ্রপন্থী রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছিল। এমন বক্তব্য বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আরো কষ্ট হয় যখন দেখিÑউগ্রবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য উপভোগ করেও সরকার চরমপন্থী ও উগ্রবাদী চিহ্নিত করার অর্থবহ উদ্যোগ নিতে পারল না, বরং জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থীর মতো বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে খামোশ করতে পুলিশি ভীতি প্রদর্শন করছে। কিছু ঘটনা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় হলো। আইএস দায় নিলো। আমরা মুখ লুকিয়ে বলছি- না, আইএস না, এরা দেশজ এবং নব্য জেএমবি। এখনো বুঝতে পারি না, ‘নব্য’ জেএমবি কেমন এবং কাদের এজেন্ট? অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে ব্লেম গেইম হয়। কিন্তু সব প্রশ্নের জবাব দেশবাসী পান না।
কোনো হত্যার পক্ষেই যুক্তি থাকে না। বিচারবহির্ভূত প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ড আরেকটি হত্যার প্রেক্ষাপট রচনা করে। সরকারের পক্ষ থেকে যতই যুক্তি দেখানো হোক- বিচারবহির্ভূত হত্যা বেআইনি, অনৈতিক, অধর্ম এবং মানুষের মর্যাদার সাথে সাংঘর্ষিক, একই সাথে আইনের শাসনেরও খেলাপ। একটি হত্যা আরেকটি হত্যাকে ডেকে আনে, প্ররোচিত করে। তাই যে আদর্শের নামেই হোক, হত্যাকে বৈধতা দিলে সৃষ্টির সেরা মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন হারায়।
হোলে আর্টিজানে হামলার পেছনে কেউ কেউ তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছিলেন। এ ধরনের কারণ খুঁজে বিষয়টিকে হালকা করা অর্থহীন। মানলাম, কূটনৈতিকপাড়ায় হামলায় স্পর্শকাতরতা বেশি। প্রচার বেশি পাওয়া যায়। উগ্রবাদীরা কতটা সক্ষম, তাও প্রকাশ পায়। বিদেশীকে হত্যার মাধ্যমে বিশ্বকে দৃষ্টি ফেরাতে বাধ্য করা সম্ভব হয়। আত্মঘাতীরা এতসব ভেবে কাজ করে বলে মনে হয় না। এ ধরনের মূল্যায়ন সান্ত্বনার। তবে এর মাধ্যমে চরমপন্থীরা আরো আস্কারা পায়। চরমপন্থীদের উদ্দেশ্য আমাদের দেখার বিষয় নয়। বিষয়টা সফলতা ও সক্ষমতার সাথে মোকাবেলার। চরমপন্থীদের সীমাহীন ধৃষ্টতার প্রেক্ষাপটে তারপর থেকে সরকার সর্বত্র জঙ্গি খোঁজার জন্য পাইকারি অভিযান শুরু করল। অভিযান চালিয়ে শিশু-নারী উদ্ধার করে কৃতিত্ব প্রদর্শন গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের দুর্বলতা বৈকি। সরকার একই সাথে বলতে শুরু করল, এই নৃশংস ঘটনার সাথে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ জড়িত নয়। জোর দিয়ে বলা শুরু হলো, সব উগ্রপন্থী দেশীয়। ওরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশে বসেই। প্রশিক্ষণও নিয়েছে দেশের মাটিতে। এতে বিদেশীরা একমত হলো না। এই দ্বিমত জনগণের দৃষ্টি এড়াল না। তাই সব কিছু শেষ হয়েও হয় না। এখনো কেউ একটা কেস স্টাডি করে নিশ্চিত করে বলল না- আসলে কারা, কেনো এ ধরনের একটি নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে বসেছিল। দুর্ভাগ্য, যাদেরই জঙ্গি বা উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদেরই লাশ বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার তালিকায় একটি নতুন লাশ যোগ হয়। কিন্তু কোনো উগ্রবাদীর কুষ্টিনামা উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। ওদের কোনো জবানবন্দী পাওয়া যায় না। ঘটনার পেছনের ঘটনা কখনো জনগণের সামনে আসে না। এটা এক রহস্যঘেরা আচরণ। জেএমবি কিভাবে নব্য জেএমবি হলো- এরও কোনো ব্যাখ্যা নেই। এটা কি উগ্রবাদের নতুন সংস্করণ বা প্রজন্ম, নাকি জেএমবি বিনাশের দাবির সত্যতা দিতে চরমপন্থীদের নতুন নাম দেয়া হলো? বাস্তবে যে নামেই ডাকা হোক, চরমপন্থীরা এক এবং অভিন্ন। তাদের ধর্ম নেই, দেশও নেই।
চরমপন্থী, চরমপন্থা ও উগ্রবাদের উপস্থিতি সব যুগেই ছিল। ধর্মকেন্দ্রিক উগ্রবাদের জন্ম ইহুদিবাদে, খ্রিষ্টতন্ত্রে। হিন্দুত্ববাদেও অধুনা গো-রক্ষার নামে সন্ত্রাস নতুন আঙ্গিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও অহিংস রইল না, শত শত রোহিঙ্গা হত্যা করে দেখালো তারা কতটা হিংস্র হতে পারে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর বিশ্বজুড়ে বিপ্লবের নামে এক চরমপন্থী নতুন ধারণার জন্ম হয়। তৃতীয় বিশ্বে এই ধারণা অধিকতর জনপ্রিয়তা পায়। গোপনে গড়ে ওঠে বিভিন্ন নামের সংগঠন। শ্রেণিশত্রু খতমের নামে গলাকাটা রাজনীতিরও উদ্ভব ঘটে একই সময়। এই দেশে ‘হক-তোয়াহার’ নামে চরমপন্থীর উত্থান হতে দেখা গেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ভারতে চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশালবাদীরা দীর্ঘদিন শ্রেণিশত্রুর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ করেছে। এ দেশে প্রতিবাদী সিরাজ সিকদারকেও সন্ত্রাসের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। সাম্রাজ্যবাদ ও ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে এ লড়াই চলেছে বছরের পর বছর। অনেকেই খ্যাতি পেয়েছেন মাওবাদী হিসেবে। সবাই জানত, তারা সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ চায়। সাম্রাজ্যবাদের পতন কামনা করে। ধনতন্ত্রের বিলুপ্তির মধ্যেই তারা সাফল্য দেখে। জাসদের গণবাহিনীকেও চরমপন্থী কিংবা উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলেছে। স্বাধীনতার পর তারুণ্যের স্বপ্নভঙ্গের দ্রোহ কতটা সঙ্গত ছিল, কতটা ছিল না- সেই বিতর্ক এখন অবান্তর; কিন্তু সব বিপ্লবী ও চরমপন্থীর একটা ঘোষিত অ্যাজেন্ডা থাকে। রাষ্ট্রীয় ‘সন্ত্রাস’ মোকাবেলা এবং তারুণ্যের দ্রোহ অনেক ক্ষেত্রে চরমপন্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে। পৃথিবীতে সব যুগে সব জনপদে স্বাধীনতাকামীরা ‘উগ্রপন্থী’, ‘চরমপন্থার অনুসারী’ ছাড়াও ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। ইতিহাসের এই অনিবার্য বাস্তবতা অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই।
একবার ভেবে দেখুন, কিভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবরদখল করে ইসরাইল নামের কৃত্রিম, বর্ণবাদী ও ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হলো। সেই ১৯৪৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষবৃক্ষ’ হিসেবে অভিহিত ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ছাড়া সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠী মুক্তিকামী মানুষের জন্য কী করেছে! ইসরাইলি সন্ত্রাস নানাভাবে আরব জাহানকে ছত্রখান করে দিচ্ছে। লায়লা খালেদের বিমান হাইজ্যাক বিশ্বজুড়ে মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে জানান দিয়েছিল- তার উদ্যোগ সন্ত্রাস নয়, চরমপন্থা নয়, স্বাধীনতার লক্ষ্যে যুদ্ধ কৌশল। এখন হামাসকে ‘চরমপন্থী’ বলা হচ্ছে। ব্রাদারহুডকে বলা হচ্ছে ‘সন্ত্রাসী’। অথচ ব্রাদারহুড গণতন্ত্র বিকাশে আরব বসন্তের নেতৃত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন পেয়েছিল। অগণতান্ত্রিক সরকার ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া, বর্ণবাদ, সন্ত্রাস ও জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করা ছাড়া তাদের আর কোনো ‘অপরাধ’ প্রমাণিত হয়নি। ফিলিস্তিনে গুলতি দিয়ে যে তরুণ ট্যাঙ্ক, কামান-গোলার বিরুদ্ধে আজাদীর লড়াই করতে মাঠে রয়েছে- তাকে বলা হচ্ছে ‘চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী’। আর ইসরাইল ও তাদের মদদদাতাদের সাজানো হচ্ছে মানবতাবাদী। এই প্রহসনের উদর থেকে উগ্রবাদী জন্ম নেবে না- এই নিশ্চয়তা কে দেবে? ট্রাম্প উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ঘি ঢাললেন। নয় তো ইসরাইলের রাজধানী জেরুসালেমে স্থানান্তরের ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে যাবেন কেন? নিশ্চয়ই ট্রাম্প সৌদি আরব আর ইরানের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলে অন্য কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান।
পশ্চিমা মিডিয়া ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সারা দুনিয়ার মুসলমানকে ‘সন্ত্রাসী ও জঙ্গি’ সাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শান্তির ধর্ম ইসলামকে জঙ্গি প্রেরণার উৎস বানিয়ে দিলো। সংক্ষুব্ধ করছে অনেক তরুণকে। প্রতিশোধকামী হতে গিয়ে কেউ কেউ বিপথে গেছে, চরমপন্থী হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার মধ্যে জান্নাত খুঁজে পাওয়ার রোমাঞ্চকর ভুল ধারণা ফেরি করছে।
কোনো বিশ্ববিবেক কি জবাব দিতে পারবেন, জর্জ বুশ-টনি ব্লেয়াররা কেন আফগানিস্তানকে পোড়ামাটি বানিয়ে দিলেন? আফগানরা তাদের জনপদে তাদের মতো থাকতে চেয়েছে। পৃথিবীতে অনেক জাতি নিজেদের মতো করে বাঁচে, নিজস্ব জীবনাচার অনুসরণ করে। আমরা ভাবি, তারা সভ্যতার ছোঁয়ামুক্ত। কিন্তু তারা ভাবে, আমরা প্রকৃতির দুশমন। সে কথা আমাদের পছন্দ না-ও হতে পারে। এর জন্য তাদেরকে বিরান করে দেয়া কোন ধরনের সভ্যতা? সাদ্দামকে হত্যা করে ইরাক দখল করে বলা হলো, ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এটা কেমন মর্মান্তিক তামাশা! সিরিয়ার দিকে তাকান; একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে। সর্বশেষ, কাতারের চিত্র পর্যবেক্ষণ করুন। আলজাজিরার বিরুদ্ধে ঘোষিত-অঘোষিত যুদ্ধ, সাইবার হামলার দিকে তাকান, ট্রাম্প এবং তার দোসরদের বিরুদ্ধে অবস্থানকে বিবেচনায় নিন। সত্যনিষ্ঠ বিবেক কী বলবে, কাজটা ঠিক করা হচ্ছে?
জাতিসঙ্ঘ এবং বিশ্বের নামীদামি শত মিডিয়া আলজাজিরার বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিয়ে সোচ্চার না হলে আমেরিকার নেতৃত্বে এই নন্দিত মিডিয়াকে ‘জঙ্গি’ তকমা পরিয়ে দেয়া হতো। কয়েকটি আরব রাষ্ট্র তো এখনো আলজাজিরার গলাটিপে ধরতে উদ্যত। জানি না, এত শিক্ষা সামনে রেখে মুসলমানরা কোন বোকার রাজ্যে বসবাস করে আত্মঘাতী যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে। নির্মোহভাবে দেখলে দেখা যাবে, লড়াইটা সত্য-মিথ্যার, জালেম-মজলুমের; দুর্বলের বিরুদ্ধে সবলের। কিন্তু পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে কিংবা ভালো কাজটা খারাপ পদ্ধতি করার হঠকারিতার কারণে আপনি ভেবে কষ্ট পাবেন। কিন্তু সমর্থন জোগাতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে একজন কাতারি তরুণ যদি সত্যিই আত্মঘাতী হয়ে ওঠে তার জন্য আমাদের বিবেকের রায় কী হবে? আমরা তার কোনো বাড়াবাড়ি পছন্দ করব না, কিন্তু প্রতিশোধের ভাষায় কি কোনো ব্যাকরণ থাকে! মজলুম কি নীতিশাস্ত্র পড়ার সুযোগ পায়?
আফগানিস্তানে যুদ্ধ চাপানোর পর এরিখ মারগোলিস বলেছিলেন, সন্ত্রাসী হয়ে কেউ জন্ম নেয় না, সাম্রাজ্যবাদী জুলুমবাজরা সন্ত্রাসী বানায়। চরমপন্থীর এমনিতে উদ্ভব ঘটে না, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজরা চরমপন্থী সৃষ্টি করে। আইএস সম্পর্কে বলা হয়, এরা আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতা পায়। বোকো হারাম নিয়েও একই কথা প্রচারিত। আমাদের চোখের সামনে সোভিয়েত-রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তালেবানদের পৃষ্ঠপোষকতা দিলো আমেরিকা। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে যুদ্ধও শুরু করল সেই আমেরিকা। এভাবে ওঝা হয়ে ঝাড়ফুঁক দেয়া, সর্প হয়ে দংশন করার যে খেলা ও ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের রাজনীতি, তার মধ্যে আমরা পড়ে যাইনি তো! সৌদি ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান বিন লাদেন এলেন তালেবানদের সাহায্য করতে। আফগানিস্তান রুশ আগ্রাসন থেকে মুক্তি লাভের পর দেশে ফিরে দেখলেন তার স্বদেশ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চারণভূমি। আবার দেখলেন, তালেবান সরকার আক্রান্ত, পাকিস্তান ড্রোন হামলার টার্গেটের মধ্যে, তখন আফগানিস্তানে ফিরে এলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র তাকে খলনায়ক সাজাল।
এই দেশে দীর্ঘদিন কওমি মাদরাসায় জঙ্গি খুঁজে বেড়ানো হলো। কওমি মাদরাসাকে ‘জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র’ সাজানো হলো। ইসলামপন্থী দলগুলোকে ‘জঙ্গি’ সাজিয়ে সাত ঘাটের পানি খাওয়ানো হলো। তখন সরকার বলতো, দেশটা জঙ্গি ও চরমপন্থীতে ভরে গেছে। এখন সুর উল্টো। এই ধারায় সরকারের প্রতিপক্ষের রাজনীতিটাও নিষিদ্ধ প্রায়। বিভিন্ন নামে চরমপন্থী উগ্রবাদীরা কার হয়ে কার বিরুদ্ধে খেলছে, আমরা জানি না; জানেন না আমাদের কাউন্টার টেরোরিজমের মুখপাত্ররাও। তারা গল্পের মতো বলে যান, শুনে জনগণ মুখ টিপে হাসে, বিশ্বাসে ঠাঁই দেয় না। এই সত্যি খুঁজে না পেলে তদন্ত শেষ হলেও আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। যখন শত্রু-বন্ধু চেনা হবে, তখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না। এক সময় আসল বাঘ ঠিকই হামলে পড়বে, তখন আর্তনাদ করেও ঘাড় মটকানোর জন্য উদ্যত বাঘকে রুখা যাবে না।
পশ্চিমা শক্তির দ্বৈতনীতির মুখোশ উন্মোচন করে চলেছেন, মারগোলিস ও রবার্ট ফিস্কসহ ক’জন বুদ্ধিদীপ্ত, বিবেকসম্পন্ন সাহসী লেখক-সাংবাদিক। ভারতে সরকারি অনাচারের বিরুদ্ধে প্রায় একাই যুদ্ধ করছেন প্রতিবাদী লেখিকা অরুন্ধতী রায়। বাংলাদেশে এ যুদ্ধ বা চিন্তার লড়াইটা শুরু করেছেন অনেকেই। সম্ভবত আমরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং অদৃশ্য খেলারামদের পুতুল হয়ে নেচে চলেছি। তাই উগ্রবাদী সন্ত্রাস থেকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আড়াল করা কিংবা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন জাগে এবং চিন্তার বিষয়, এরপর কে হতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার? কারণ ঘুরেফিরে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীজুড়ে সব সঙ্কটের মূলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসই দায়ী। রাষ্ট্রনায়করাই কেউ দেশীয় মাস্তান, কেউ বা আন্তর্জাতিক মাস্তান সেজে সন্ত্রাস টিকিয়ে রাখছেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post