জেরুজালেমকেকে ইসরায়েলি রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়া মার্কিন সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সে এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর সংগঠনটির ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আনন্দশোভা যাত্রায় এ ঘোষণা দেয় হামাস। দলটির নেতা ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ‘চুরমার’ করে দিবো। কোনও পরাশক্তিই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ইসরায়েল নামে কোনও দেশ নেই।তাই এর কোনও রাজধানীও থাকতে পারেনা।
গত ৬ ডিসেম্বর বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, খুব শিগগিরই তেল আবিব থেকে ইসরায়েলে দূতাবাস সরিয়ে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কথা বলেছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও।
এছাড়া সহিংস বিক্ষোভও ছড়িয়ে পরে মুসলিম বিশ্বে। রাজপথে নেমে আসেন ফিলিস্তিনি নাগরিকরা। ফিলিস্তিন ছাড়য়ে এই প্রতিরোধ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য দেশগুলোতেও। সব জায়গায় আন্দোলন হয় মার্কিন দূতাবাসকে কেন্দ্র করে।
বলিষ্ঠ প্রতিরোধ গড়ে তোলায় ফিলিস্তিনিদের প্রশংসা করেন ইসমাইল হানিয়া। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার জিইয়ে রাখতে হামাস সদস্যরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার।
ইসমাইল হানিয়া বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ বিশেষ করে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) শহরকে সুরক্ষা দিতেই হামাসের জন্ম। এই পবিত্র শহর নিয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দুনিয়াজুড়ে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে তা ফিলিস্তিনি জাতির জন্য একটি বিরাট বিজয়। দুনিয়ার সব মুক্তিকামী মানুষ এ বিষয়ে আমাদের পাশে রয়েছে।
এসময় অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীও সঙ্গে ছিলো হামাসের। হানিয়ে বলেন, আমরা জেরুজালেম সম্মুখে যাচ্ছি। অনেক মানুষ শহীদ হচ্ছেন।
এর আগে দিনের শুরুতে গাজা সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। বিমান হামলার মাধ্যমে গুড়িয়ে দেওয়া হয় হামাসের তিনটি ভবন। ইসরায়েলের দাবি, প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। তবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর স্পষ্ট হয় ১৯৮৭ সালে। ইন্তিফাদা নামের সেই সময় শুরু হওয়া গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরের বছর হামাসের আত্মপ্রকাশ। ধর্মভিত্তিক সংগঠনের পরিচয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে দলটির। হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্র ছিল ইহুদি বিদ্বেষে ঠাঁসা। তবে দলটি ফিলিস্তিনিদের জাতিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা জোরালো করে তুলতে শুরু করার পর সেই পরিস্থিতির সমান্তরালে বদলে যেতে থাকে হামাস। ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নকে সরাসরি সামনে আনতে পারায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় হামাস। ২০০৬ সালে দলটি ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তবে হামাসকে নিয়ে ইসরায়েল-আমেরিকার বাইরে সৌদি জোটেরও অস্বস্তি রয়েছে।
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে হামাসকে সমর্থন দেওয়ার জন্য কাতারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর জবাবে কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু আরব দেশগুলোর কাছে হামাস একটি বৈধ প্রতিরোধ আন্দোলন। আমরা হামাসকে সমর্থন করি না। আমরা ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করি।’
প্রথম ইন্তিফাদার (গণজাগরণ) সময় থেকেই পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের প্রতিরোধ জারি রয়েছে। প্রথম ইন্তিফাদার সময়ে হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘ইসরায়েলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করাটাই সংগঠনের মূল তবে ফিলিস্তিনি জনতার জাতিসত্তার বোধ জাতিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা জোরালো করে তুলতে শুরু করার পর, সেই পরিস্থিতির সমান্তরালে বদলে যেতে থাকে হামাস। মূলত দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা আল আকসা ইন্তিফাদার সময়কালে (২০০০–২০০৫) হামাসের রাজনীতিতে এক বিশেষ রূপান্তর ঘটতে শুরু করে। এ সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শিক অবস্থানকে ছাপিয়ে যায় ফিলিস্তিনের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post