অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কিছু দিন পর পর সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করছে সরকার। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন যা দাবি করছে সরকার তাই পূরণ করছে। বলা যায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন চাওয়ার আগেই সব কিছু পাচ্ছেন।
আর প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে পদ খালি না থাকা সত্ত্বেও কিছু দিন পর পরই গণহারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। একটি পদের বিপরীতে যুক্ত হচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা। পদবি পেলেও তারা বসার জায়গা পাচ্ছেন না। তাই বড় পদবি নিয়েও আগের পুরনো পদের কাজই করছেন। পদের মর্যাদা অনুযায়ী কাজ না পাওয়ায় এনিয়েও আবার প্রশাসনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এমন অবস্থায় আবার সোমবার যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার ১২৮ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত সচিবের স্থায়ী পদ ১১১টি হলেও নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্তদের নিয়ে এ পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬০। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, নির্ধারিত পদসংখ্যার চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ায় অধিকাংশ কর্মকর্তাকেই আগের পদেই পদায়ন (ইন সি টু) করা হবে।
এর আগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ৫৩৬ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। তারও আগে ওই বছরের মে মাসে এই তিন পদে আরও ২১৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে আরও ৮৭৩ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় সরকার। গত ২৩ এপ্রিল ২৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার।
জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যে যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়া হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই প্রশাসন নির্ভর হয়ে পড়ে সরকার। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। বিরোধীদল যাতে মাঠে নামতে না পারে সেজন্য সরকার র্যাব-পুলিশ ও বিজিবিকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বলা যায় র্যাব-পুলিশই সরকারকে এখন টিকিয়ে রেখেছে। এজন্য র্যাব-পুলিশ ও বিজিবিকে সরকার সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। দেয়া হচ্ছে গণহারে প্রমোশনও।
এরপর প্রশাসনের মূলকেন্দ্রস্থল হল সচিবালয়। এখানে যাতে কোনো প্রকার বিদ্রোহের সৃষ্টি না হয় সেজন্য কিছু দিন পর পরই পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। আর পদোন্নতি ও প্রমোশন দেয়া হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায়। আস্থাভাজনদের দেখে দেখে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছে সরকার। বলা যায় প্রশাসনে এখন চেইন অব কমান্ড চলছে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে। যে যত বড় আওয়ামী লীগার সেই তত বেশি প্রভাবশালী।
একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, সরকারের টার্গেট যেকোনো উপায়ে আগামীতে ক্ষমতায় আসা। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে হাতে রাখতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গণহারে পদোন্নতি দিচ্ছে। জনগণের চেয়ে প্রশাসনকে বেশি খুশি রাখতেই সরকার এখন বেশি ব্যস্ত।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীন দল প্রশাসনকে নিজের পক্ষে রাখতে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে। এর একটি হচ্ছে পদোন্নতি। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু পদের সমপরিমাণ কাজ ও দায়িত্ব না পেলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মনে ক্ষোভ জন্মায়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
তাদের মতে, পদ অনুসারে কাজ দিতে না পারলে এ ধরনের পদোন্নতি দেওয়া অনুচিত। পদোন্নতি পেলে আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বাড়ে কিন্তু এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দায়িত্ব বণ্টন না হলে অসন্তুষ্টিও বাড়ে। এর ফলে একাধিক বস তৈরি হয়। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা দেখা দেয়।
Discussion about this post