জুনায়েদ আব্বাসী
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষকদের নারী কেলেংকারি, শিক্ষক নিয়োগ কেলেংকারি, প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেংকারি, ভর্তি পরীক্ষা কেলেংকারি ও গবেষণার জন্য বরাদ্দ টাকা কেলেংকারি সহ নানান কেলেংকারির ঘটনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে।
তবে, অতীতের সব কেলেংকারিকে ছাপিয়ে গেছে সর্বশেষ সংঘটিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সামিয়া রহমানসহ আরও কয়েকজনের অন্যের গবেষণা চুরির কেলেংকারির ঘটনা। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠা ঝড় দেখে মনে হচ্ছে সাংবাদিক সামিয়া রহমানের গবেষণা চুরির ঘটনার নীচে আরও বড় ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন ও মিডিয়া পাড়া থেকে শুরু করে সবখানেই এখন আলোচনার বিষয় সামিয়া রহমানের গবেষণা চুরির ঘটনা।
জানা গেছে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্যা সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি আর্টিকেল থেকে সামিয়া রহমান ও মারজান লেখা চুরি করেছেন। ১৯৮২ সালের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র ৪ নম্বর ভলিউমের ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ফুকোর এই আর্টিকেলটি প্রকাশিত হয়েছিল। সামিয়া ও মারজানের আর্টিকেল ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্যা কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ গত বছর ডিসেম্বরে ঢাবির সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এনিয়ে যখন সারাদেশে তোলপাড়, তখন বেরিয়ে আসছে আরেক নতুন তথ্য। সামিয়া রহমান শুধু মিশেল ফুকোর লেখা চুরি করে ক্ষ্যান্ত হয়নি, চুরি করেছেন মার্কিন দার্শনিক অধ্যাপক এডওয়ার্ড সাঈদের লেখাও। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজান লেখা কপি করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। সাঈদ একাডেমি অব প্যালেস্টাইন থেকে এ অভিযোগ করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ এর ‘টু ভিশন ইন হার্টনেস অব ডার্কনেস’, ‘কনসোলিডেটেড ভিশন’, এবং ‘ওভারলেপিং টেরোরিস্ট, ইন্টারউইন্ড হিস্টোরিস্ট’ আর্টিকেল থেকেও লেখা কপি করা হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপশি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও কাজ করছেন সামিয়া রহমান। বেসরকারি একটি চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেন সামিয়া রহমান। সামিয়া রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হলেও তাকে কেউ চিনতো না। মুজাম্মেল বাবুর একাত্তর টিভি চালু হওয়ার পরই মানুষ তার নাম জানে। আর সামিয়া রহমানকে একজন বিতর্কিত সাংবাদিক হিসেবেই জানে মানুষ। গবেষণা চুরিতে ধরা খাওয়ার পর তার আসল চেহেরা বেরিয়ে এসেছে। আরেকজনের লেখা চুরির অভিযোগে গণমাধ্যম অঙ্গন থেকে তাকে বহিস্কার করারও দাবি উঠেছে।
অনেকে আবার বলছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাফর ইকবালের শিষ্য হলেন সামিয়া রহমান। জাফর ইকবালই প্রথম বিদেশি লেখকদের বই অনুবাদ করে নিজের নামে ছাপিয়ে বিজ্ঞান লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। আর সামিয়া রহমান যেহেতু জাফর ইকবালের একান্ত শিষ্য, তাই তার পক্ষেও অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে ছাপানো সম্ভব। জাফর ইকবাল ও সামিয়া রহমানরা একই নীতি আদর্শের লোক।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাফর ইকবাল বিদেশি কাহিনীর অনুকরনে, ছায়া অবলম্বনে বই লিখে নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে। কিন্তু, বইয়ের কোথাও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেননা তিনি।
যেমন জাফর ইকবালের চুরি করা কয়েকটি বই হলো-
আসল- অ্যালিয়েন (১৯৭৯): জাফর ইকবাল নাম দিয়েছেন ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম (১৯৮৮)।
আসল- পিচ ব্ল্যাক (২০০০): জাফর ইকবাল নাম দিয়েছেন অবনীল (২০০৪)।
আসল- ম্যাটিল্ডা (১৯৮৮, বই) (১৯৯৬, চলচ্চিত্র): জাফর ইকবাল নাম দিয়েছেন নিতু আর তার বন্ধুরা (১৯৯৯)।
আসল- বেবি’জ ডে আউট (১৯৯৪)। জাফর ইকবাল নাম দিয়েছেন মেকু কাহিনী (২০০০)।
আসল- আ চাইল্ড কলড “ইট” (১৯৯৫) : জাফর ইকবাল নাম দিয়েছেন আমি তপু (২০০৫)।
এভাবে জাফর ইকবাল বিদেশি লেখকদের লেখা বিজ্ঞান বিষয়ক, গল্প, নাটক, সিনেমার কাহিনী সহ বিভিন্ন বই বাংলা অনুবাদ করে তার নিজের নামে ছাপিয়েছেন।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, অপরের লেখা চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন জাফর ইকবাল। আর সামিয়া রহমান যেহেতু জাফর ইকবালের শীষ্য তাই গুরুকেই তিনি অনুসরণ করেছেন।
Discussion about this post