অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কিছু দিন বিরতির পর দেশে আবারো গুম-অপহরণ শুরু হয়েছে। গত ১ সপ্তাহে ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদসহ ৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের শামীম নামের একজন কর্মকর্তাকে গত সপ্তাহে পল্টন থেকে তুলে নিয়ে যায় দুর্র্বৃত্তরা। ৫ দিন পর মঙ্গলবার রাতে তাকে মতিঝিলের কোনো এক জায়গায় চোখ বেঁধে ফেলে দিয়ে যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হলেও এখনও পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান দিতে পারছে না পুলিশ।
এরপর ২৬ আগস্ট ধানমন্ডি লেক থেকে কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ইশরাক আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে সে দেশে এসেছিল।
২৭ আগস্ট রাতে অপহরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমানকে। নিখোঁজের ৪ দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাচ্ছে না তার পরিবার ও দল।
এছাড়া নিখোঁজ ও অপহরণের পর নদী-নালা, খাল-বিল থেকে লাশ উদ্ধারের যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোও থেমে নেই।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ৪ জন মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা আজ ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে বের করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অপরদিকে, কল্যাণ পার্টি একটি পরিচিত রাজনৈতিক দল। দলটি ছোট হলেও মহাসচিব আমিনুর রহমানের তৎপরতা ছিল বলিষ্ট। সরকারের দমন নীতিসহ সাম্প্রতিক সব ইস্যুতেই তিনি মাঠে ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন।
তার অপহরণের ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সরকার তাকে পরিকল্পিতভাবে গুম করেছে বলেও অভিযোগ করছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
এক সপ্তাহের মধ্যে ৪ জন মানুষ নিখোঁজের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন, কারা এসব করছে? টাকার জন্য অপহরণকারী চক্র যদি করে থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না কেন? আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে অপহরণকারীরা কী করে লুকিয়ে রাখতে পারে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব গুম-অপহরণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি জড়িত। সরকারের ইশারাতেই তারা কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমানকে গুম করেছে।
কেউ কেউ বলছেন, আদালত ও রাজনৈতিক চাপে সরকার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এসব গুম-অপহরণের মাধ্যমে সরকার আদালত ও বিরোধীদলকে সতর্ক করতে চাচ্ছে ও তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। যাতে করে তারা সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলনে না নামে।
Discussion about this post