“পানির নীচে রাস্তা ভালো”। অদ্ভুত এই বক্তব্যটি লেখা রয়েছে ঢাকার ট্রাফিক বিভাগের একটি সাইনবোর্ডে।
এয়ারপোর্ট থেকে বনানীর দিকে আসতে র্যাডিসন হোটেল সংলগ্ন ফ্লাইওভারটির গোড়ায় সাইনবোর্ডটি স্থাপন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ।
সাইনবোর্ডটির একটি ছবি তুলে ফেসবুক পাতায় শেয়ার করেছেন সাংবাদিক, ব্লগার ও ইউটিউবার নূর সিদ্দিকী। সেই সাথে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন এ সংক্রান্ত।
তিনি জানাচ্ছেন, একটু বৃষ্টি হলেই এয়ারপোর্ট থেকে আসা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এই অংশ একদম কোমর অব্দি পানিতে ডুবে যায়।
স্বভাবতই অজানা বিপদ এড়াতে সড়কের জলমগ্ন অংশটি এড়িয়ে চলতে চায় যানবাহনগুলো।
আর এর ফলে এই স্থানটিতে লেগে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দীর্ঘস্থায়ী যানজট।
যানজট ছোটাতে হিমশিম খাওয়া ট্রাফিক বিভাগ এখন এই কৌশল করেছে।
তারা সাইনবোর্ড লিখে জানাচ্ছে যে, সড়কের জলমগ্ন অংশটিতে কোনো লুকনো বিপদ-আপদ নেই। রাস্তা ভালই আছে। অতএব যানবাহনগুলো নির্দ্বিধায় পানির উপর দিয়ে যেতে পারে।
সাইনবোর্ডটিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও মি. সিদ্দিকী বিবিসিকে বলেন, “সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম যেভাবে ডুবে যায় তাতে পুলিশ বা ওয়াসা যদি এভাবে সাইনবোর্ড দিয়ে মানুষকে সাহায্য করতে চায়, তবে কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা ভেবেই হাসি পাচ্ছে”।
“ভাবুনতো ঢাকা শহরে হাজার হাজার সাইনবোর্ড দাঁড়িয়ে আছে, আর সেগুলো দেখে চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারীরা”।
অবশ্য ঢাকার ট্রাফিক বিভাগের এমন অদ্ভুত সাইনবোর্ড লাগানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়।
ফার্মগেটে এক সময় একটা সাইনবোর্ড দেখা যেত ট্রাফিক বিভাগের, যেখানে লেখা ছিল, “এখানে বাস থামানোর কথা চিন্তাও করবেন না, থামালেই দণ্ড।”
অনেক রসিক বাস চালককেই সেসময় দেখা গেছে সেই সাইনবোর্ডের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাতে।
র্যাডিসন হোটেলের সামনে ট্রাফিক বিভাগের এই একটি সাইনবোর্ডই ঢাকার মানুষের যানজট ও জলজটে নাকাল পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট।
গত কদিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকার মানুষ যে কী পরিমাণ ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে একটু নজর বোলালেই বোঝা যায়।
মিশর প্রবাসী মাহমুদুল হাসান দুবাই হয়ে ঢাকা এসেছেন।
বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, গতকাল সকালে দুবাই থেকে ৪ ঘন্টা ১৫ মিনিটে ঢাকার বিমানবন্দরে এসেছেন তিনি। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে তার খিলগাঁও যেতে লেগেছে ৪ ঘন্টা ১৬ মিনিট।
তিনি লিখেছেন, “এমন দুর্ভোগ পোহানো যদি বাধ্যতামূলক হয় তাহলে মানুষের ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন সব মরে যায়”।
মোখলেসুর রহমান লিখেছেন, “রিক্সা, বাসের পাশাপাশি একই রাস্তায় নৌকা পরিবহন। আর কি চাই!!? সবই উন্নয়নের খেলা।”
পাপড়ি কাউছার লিখেছেন, “সড়কপথের সকল যানবাহন তুলে দিয়ে নৌকা নামানো হোক, তাহলে জনগণের ভোগান্তি কিছু কমবে।”
অবশ্য এই জলজট যানজটের মধ্যেও কেউ কেউ ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন ফেসবুকে এফ পারভিন লিখেছেন, “যানজট মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায়।”
মেহতাব হাকিম নীল লিখেছেন, “আমি চাই মাসে একবার এরকম হোক তাহলে আমরা যে পরিমাণ নোংরা ময়লা যেখানে সেখানে ফেলি সব ধুয়ে মুছে যাবে। আরো সুবিধা হবে, নৌকার কদর বাড়বে। নতুন করে নৌকা শিল্প বাড়বে।”
জানা যাচ্ছে টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকায় যানজট পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে গতকাল। এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তাগুলোতে যানজট ছিল। ভোরবেলায়ও দেখা গেছে ব্যস্ত কর্মদিবসের মতো তীব্র যানজট।
পরিস্থিতি জরুরী অবস্থা ঘোষণার মতো বলে মনে করছেন সাগর লোহানি।
তিনি ফেসবুকে একজন সুপরিচিত ক্যাম্পেইনার। যে কোন ইস্যুতেই তাকে ফেসবুকে বক্তব্য ও দাবী তুলে ধরতে দেখা যায়।
তিনি লিখেছেন, “ঢাকা শহরে বসে বা ক্ষমতার আঁচল জড়িয়ে আছেন যারা তারা কখনই বুঝবেন না “উন্নয়ন” এর জোয়ারে সারাদেশের কি নিদারুণ অবস্থা! যে কোনো সভ্য দেশ এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে “জরুরী অবস্থা” ঘোষণা করতো!”
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Discussion about this post