অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সুুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে স্থাপিত তথাকথিত ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রীক দেবতা থেমিস দেবীর মূর্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীও মত দিয়েছিলেন তিনিও এই তথাকথিত মূর্তির পক্ষে নন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একাত্মতার পরেও মূর্তি অপসারন নিয়ে তৈরি হয়েছিলো অনিশ্চয়তা। অবশেষে ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতার একের পর এক বিক্ষোভের পর সরকার বাধ্য হলো মূর্তি অপসারন করতে।
২৬ মে ভোররাতে হঠাৎ করেই মূর্তিটি অপসারন করা হয়। তবে মূর্তিটির নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হকের ভাষ্যমতে মূর্তিটি একেবারে অপসারন করা হচ্ছে না। এটিকে সুপ্রিম কোর্টের পেছনে এনেক্স ভবনের সামনে পুন:স্থাপন করা হবে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের পেছনে মূর্তিটি বসানো হবে কি হবেনা সে ব্যপারে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় আপাদত সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারনে মূর্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া প্রতিবাদি জনগন অনেক খুশি। কথা দিয়ে কথা রাখায় তারা প্রধানমন্ত্রীকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। মূর্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাযতের পক্ষ থেকেও সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের জোয়ার। মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হাসান মোহাম্মদ জামিল তার ফেসবুকে লিখেছেন- “আলহামদুলিল্লাহ। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ পবিত্র। চেতনাব্যবসায়ীদের জন্য রামাযানের অগ্রিম শুভেচ্ছা। যারাই মূর্তি অপসারণ আন্দোলনে শরিক ছিলেন, সবাইকে মোবারকবাদ।”
পিনাকি ভট্টাচার্য তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “মধ্যরাতে অপকৃষ্ট আবর্জনা অপসারিত হয়েছে। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ইউরোপের ইতিহাসকে আমাদের আত্মীকরণ করানোর অপচেষ্টা পরাজিত হয়েছে। এই বিজয়ের তাৎপর্য অপরিসীম। থেমিস হয়ে উঠেছিলো আমাদের পশ্চিমের অনুকরণপ্রিয় স্যেকুলারপন্থী চিন্তার প্রতীক। সেই থেমিস অপসারনে পশ্চিম প্রেমী স্যেকুলারপন্থী রাজনীতির কফিনে আরেক পেরেক পোতা হলো। ইউরোপের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস নয়। ইউরোপের ইতিহাস অনুকরণে আমাদের মুক্তি নেই। আমাদের ইতিহাস আমাদের নিজেদের গড়ে নিতে হবে। এই সরল সত্যটা স্যেকুলারপন্থীরা অনুধাবন করলেই মনে করি তাদের জন্য একটা বড় অর্জন হবে।”
আদনান আজিজ নামে একজন সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে লিখেছেন, “সরিয়ে ফেলা হলো গ্রিক দেবীর মূর্তি সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে। সাধুবাদ জানাই। ধর্মীয় উপাসনালয়ের বাহিরে যতো ভাস্কর্য আছে সবগুলো সরিয়ে ফেলার দাবি জানাই।”
মাহমুদুল হাসান নামে একজন লিখেছেন-
“দেব দেবীর মুর্তী তো সামান্য ব্যাপার, ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে এইসব দেবীদের পিছনের ভয়ানক কাল্পনিক কিহিনিগুলো। এইসব গল্প কাহিনিগুলো থেকেই উৎপত্তি সমস্ত কুসংস্কারের, সমস্ত সামাজিক অন্ধ বিশ্বাসের। থেমিস দেবীর মুর্তী অপসারণের উদ্দেশ যাই হোক না কেন, চোখের সামনে থেকে দন্ডায়মান এক কুসংস্কারের মুর্ত প্রতিক সরে গেছে এটি অবশ্যই একটি পজিটিভ ও লজিকাল বিষয়। বিচার ব্যাবস্থাকে নিরপেক্ষ করতে, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে যদি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন মোরে, বাগানে কিংবা স্টেশনে যদি কোন স্থাপনা বা স্ট্যাচু করতেই হয় তবে সেটা বইয়ের আদলে করা হোক। বড় বড় বইয়ের স্ট্যাচু বানানো হোক, এক্টি দুটি বই নয় একেবারে বইয়ের সেল্ফের স্ট্যাচু বানানো হোক ”
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারন নিয়ে দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে গুটিকয় সেক্যুলারদের পক্ষ নিয়ে মিডিয়ার একচেটিয়া মায়াকান্নায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারন মানুষসহ ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা। তারা ফেসবুকেও এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ায় ফেসবুকে ঝড়’ শিরোনামে গুটিকয় শাহাবাগী সেক্যুলারের ফেসবুক মন্তব্য দিয়ে তৈরিকৃত একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ার করে সেক্যুলারপন্থি একটি অনলাইন পোর্টাল। সেখানের মন্তব্য অপসনে ব্যপক আকারে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাতে দেখা গেছে সাধারণ ও ইসলামপ্রিয় জনতাকে।
এই নিউজটির প্রায় ৯০ ভাগ কমেন্টে সবাই বলেছে, “এটা আনন্দের ঝড়, এটা খুশির ঝড়, এটা বিজয়ের ঝড়।” একজন বলেছেন, “সবাই ভাল বলেই ঝড় তুলেছে, তাইনা এডমিন”। আরেকজন বলেছেন, “ঝড় কেনো? আনন্দের উল্লাস বলেন”। আরেকজন লিখেছেন, “ফেসবুকে ঝড় না , নাস্তিকদের মনের টাইমলাইনে ঝড়।” রাশেদ নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “কেউ অখুশি হয় নাই। বেশিরভাগ মানুষ খুশিই হইছে এক আধ জন নাস্তিক ছাড়া।”
মুন্নি সাহাদের মত কিছু সাংবাদিকের দেশের সিংহভাগ মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্লজ্জ একপেশে ভূমিকার প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানিয়েও অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন। মাহাদি হাসান সাজিদ নামে একজন লিখেছেন-
“আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনাই, একটা ভাষ্কর্য সরানো নিয়ে মুন্নি সাহা ম্যাম এর স্বাধীনতার চেতনার ওপর আঘাত দেখিয়াছি। কিসের ন্যায়বিচারের প্রতীক? গ্রীস থেকে একটা দেবীর কন্সেপ্ট কপি করে শাড়ি-ব্লাউজ পড়িয়ে দিয়ে ভাষ্কর্য করে বাঙালির ন্যায়বিচার নিশ্চিত? কিসের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপমান? মুক্তিযোদ্ধারা কি সুপ্রীমকোর্টে একটা ভাষ্কর্য বসানোর জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? হিস্টোরিকালি মুক্তিযুদ্ধে কি কোনো ভূমিকা আছে এ ভাষ্কর্যের? কিসের হেফাজত? ৯০%+ মুসলিমের দেশে আমাদের একটা দেবীর ভাষ্কর্য বসানো কেবল হেফাজতের মাথাব্যাথা? প্রশ্ন আসতেই থাকে। মুন্নি সাহা ম্যাম বলিলেন, “কারো ভালো লাগবে না বলে, কারো ধর্মীয় চেতনায় আঘাত লাগবে বলে এটা সরিয়ে ফেলা তো উচিত নয়, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে ব্লা ব্লা ব্লা…” আর ইনাদের মুখেই আমরা ধার্মীয় সম্প্রীতির বুলি শুনি, ইনারা আমাদের অনুভূতি জানতে চান। What an irony!!”
মুজাহিদ হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, “সুপ্রিম কোট প্রাঙ্গনে গ্রীকদেবী থেমিসের মূর্তি সরানোর শোকে চুলকাতে চুলকাতে এটিএন নিউজের মুন্নি সাহা অনবরত মুর্তি নিয়ে উস্কানীমূলক নিউজ করেই যাচ্ছে। মুর্তি নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ”
এদিকে ভাস্কর মৃনাল হকের দুরকম কথাবার্তার প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে একেএম ওয়াহিদুজ্জামান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “মৃনাল হক বলেছেন, “সাংবাদিকরা জনগণের প্রতিনিধি”। অশিক্ষা কোন পর্যায়ে গেলে জনপ্রতিনিধি’র সংজ্ঞা অজানা থাকে বুঝুন! তিনি আরো বলেছেন, “আমি ‘পুতুল’ হয়ে গেছি”। নিম্নমানের ‘পুতুল’ তৈরী করে ‘ভাষ্কর্য’ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার পরিনতি তো এটাই হবার কথা। তবে সবচেয়ে মজার বিষয়; এতকাল গ্রীকদেবী ‘থেমিস’ বলে মুখে ফেনা তুলে, এখন মৃনাল বলছেন, এটা ‘বাঙালী মেয়ে’ ”
অন্যদিকে অনেকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরিয়ে পুনরায় কোর্টের পিছনে পুনঃস্থাপনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, সবার দাবি ছিলো মূর্তি সমূলে উচ্ছেদের। শুধু সামনে থেকে সরানোই দাবি ছিলো না। সামনে থেকে সরিয়ে পিছনে পুনরায় বসানোকে মূর্তি অপসারন বলে না। এ সম্পর্কে তারিকুল ইসলাম নামে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন- “গ্রিকদেবীর মূর্তি সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে পিছনে আইনজীবীদের এ্যনেক্স বিল্ডিংএর সামনে বসানো হবে…. যাহা ছিলো লাউ তাহাই কদু! ”
Discussion about this post