অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংবিধান অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আরও অনেক বাকী। আরও পৌনে দুই বছর। কিন্তু, নির্বাচনী প্রচারণায় পুরোদমে মাঠে নেমে গেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রতিটি সভা-সমাবেশই হচ্ছে নির্বাচন কেন্দ্রিক। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে যে কয়টা জনসভা করেছেন সবগুলোতেই তিনি আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়েছেন। বলা যায়, দুই বছর বাকী থাকলেও আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরি নির্বাচনী মাঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের প্রথম থেকেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যদিও তখন বিষয়টি তারা প্রকাশ করেনি। তখন অবশ্য তাদের ওপর মধ্যবর্তী নির্বাচনের একটি চাপও ছিল। এরপর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত দলটির জাতীয় সম্মেলনে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক বক্তৃতা-বিবৃতি শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে বিরোধীদলগুলো। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি চাচ্ছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে তারা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অটল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনে যেতে চায় না আওয়ামী লীগ। আবার এমন নির্বাচনও তারা দেবে না যে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। প্রয়োজনে তারা ক্ষমতা তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে দিয়ে চলে যাবে। তারপরও বিএনপির হাতে ক্ষমতা দেবে না।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার সুযোগ এবার আর তাদের নেই। আগের নির্বাচনে প্রতিবেশি দেশ ভারত তাদেরকে যেভাবে একচেটিয়া সমর্থন দিয়েছিল এবার আর তা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করে এলেও সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন এখনো চলছে। আগামী নির্বাচন বিষয়ে শেখ হাসিনাকে ভারত কোনো সবুজ সংকেত দেয়নি। এমনকি বিএনপির প্রতি মোদির সহানূভূতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলেও মনে করছে সরকার। সরকারের ধারণা বিএনপির কারণে তিস্তা চুক্তি হয়নি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ভারতের একচেটিয়া সমর্থন পাচ্ছে না এটা এখন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার জানতে পেরেছে যে, ক্ষমতা হাতছাড়া হলে দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশ কঠিন বিপদের মুখে পড়বে। বিগত ৯ বছরের বেপরোয়া দুর্নীতি, লুটপাট, খুন-হত্যা অপহরণের শিকার হওয়া মানুষগুলো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। জনরোষ থেকে বাঁচা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। অধিকাংশ নেতাকর্মীই বাসা-বাড়িতে থাকতে পারবে না। এমনকি আরও বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। নিজেদের ভবিষ্যত পরিণামের কথা চিন্তা করে বিএনপির হাতে ক্ষমতা না দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আরেকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে চলে গেলে বিএনপিকে বাদ দিয়েই তারা একটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দেবে। তখন তাদের টার্গেট হবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে অরাজকতা ও গণ্ডগোল সৃষ্টি করা। একটি সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নিজেরা ছিটকে পড়বে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই একটি গ্রুপ দলীয় সভানেত্রীসহ সিনিয়র নেতাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন যে, আগামীতে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা না থাকলে ক্ষমতা যেন শর্তসাপেক্ষে তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে দিয়ে দেয়। তাদেরও কথা হল বিএনপি-জামায়াতের হাতে কোনোভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না।
Discussion about this post