একথা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশ এখন একটি প্রশাসনিক রাষ্ট্র। প্রশাসনের লোকজনই হল এ রাষ্ট্রের জনগণ। কারণ বিগত ১৬ বছর ধরে প্রশাসনের লোকজনই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বারবার ক্ষমতায় বসিয়েছে।
এমনকি হাসিনার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেও তারা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আর বিনিময়েও শেখ হাসিনা প্রশাসন নামের আওয়ামী কর্মকর্তাদেরকে অনৈতিকভাবে অবাধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার,সচিবসহ প্রশাসনের সব স্তরের লোকজন যখন যা চাইছে শেখ হাসিনা তাই দিচ্ছে।
দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও জনমতকে উপেক্ষা করে প্রশাসনের লোকজন একতরফা নির্বাচন আয়োজনে শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে। এক কথায় বললে প্রশাসনের লোকজন রাষ্ট্রের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন হলেও তারা এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা এখন আর রাষ্ট্রের কর্মচারী নয়, তারা এখন শেখ হাসিনার কর্মচারী।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় কর্মীর মতো কাজ করায় শেখ হাসিনাও তাদেরকে বড় ধরণের উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেটা হল প্রশাসনের লোকজনের আয় আর প্রদর্শন করতে হবে না। তাদের সম্পদের বিবরণী আর জমা দিতে হবে না। অবৈধভাবে তারা যে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে সেটার আর জবাবদিহী করতে হবে না।
জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান বাদ দিয়ে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘যদি প্রয়োজন হয়’, তাহলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব সরাসরি তাঁর কাছ থেকে না নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দেওয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন থেকে নেওয়া যাবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে দেওয়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন থেকে নেওয়ার যে যুক্তি, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। আইনের ৩০৯(২) ও ৩০৯(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো সরকারি কর্মচারীকে এই আইনের অধীন কোনো ট্যাক্স রিটার্ন, অ্যাকাউন্ট বা নথি উপস্থাপন, সাক্ষ্য বা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের আদেশ দিতে পারে না। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতি বা বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ আহরণের অভিযোগে কোনো ব্যক্তির আয়কর বিবরণী আদালতের নির্দেশ ছাড়া দেখতে পারবে না।
এছাড়া, ২০০৩ সালে গৃহীত জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ (আনকাক) এ জনপ্রতিনিধিসহ সব সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর দাখিল ও তার বছরভিত্তিক পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২এর মাধ্যমে এ অঙ্গীকারের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৬ বছরে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তারা অতিমাত্রায় লুটপাট করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে তারাই এই আইন সংশোধনে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। কারণ, তাদের সম্পদের বিবরণী জমা দিলে দুর্নীতি-লুটপাটের সব তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়বে। এই কারণে এ আইনের সংশোধনী চায়।
Discussion about this post