বাংলাদেশে ২০০৭-২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেগুলোর প্রস্তুতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হবার আগেই সম্পন্ন করা হয়েছিল।
ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এ কথা জানিয়েছেন।
বিবিসি বাংলার সাপ্তাহিক আয়োজন ‘এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার’ অনুষ্ঠানে মি. হোসেন বলেন, তৎকালীন সামরিক কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন।
মইনুল হোসেন বলেন, “একটা জিনিস আমি এখন বলতেছি আপনাকে, সেটা আপনি ভেরিফাই (যাচাই) করেন সাংবাদিক হিসেবে, দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে, এ মামলাগুলোর কাগজপত্র আগে থেকেই তৈরি ছিল। নাইনটি-নাইন পার্সেন্ট। একটা হয়তো হইতে পারে .. একমাত্র ঐ যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাস্টের একটা ব্যাপার নিয়ে। ঐটা মনে হয় তারা নতুন করেছে.. সেটা ভিন্ন কথা।”
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অবশ্য দেখা যাচ্ছে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আর এর আগে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সংখ্যা ছিল নয়টি।
এছাড়া বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
তৎকালীন সেনা কর্মকর্তাদের মনোভাব উল্লেখ করে মইনুল হোসেন বলেন, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নিতে চেয়েছিলেন।
মি. হোসেন বলেন, “তাদের (সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের) একটা বক্তব্য ছিল যে ব্যারিস্টার সাহেব আমরা তো বেশি দিন থাকবো না, কিন্তু একটা শিক্ষা দেয়া উচিত যে নো বডি ইজ অ্যাভাব ল (কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।) – সে প্রাইম মিনিস্টার হোক আর প্রেসিডেন্ট হোক। সে হিসেবে তাদের একটা অ্যাটিটিউড কাজ করছে। এটা আমি অস্বীকার করবো না।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো আদালত বাতিল করে দেয়। এছাড়া চাঁদাবাজির অভিযোগে যে মামলা হয়েছিল, সেগুলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যাহার করে নেন মামলার বাদীরা।
তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো এখন চলছে।
মইনুল হোসেন জানান, সেই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা উপদেষ্টা ছিলেন তারা ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ লক্ষ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু সেনা কর্মকর্তারা কথিত দুর্নীতির বিষয়ে বেশি মনোনিবেশ করেন।
একটা ধারনা রয়েছে যে খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাসহ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তাদের গ্রেফতারের পেছনে একটি বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
এক বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন মি. হোসেন।
রাজনৈতিক মহলে তখন গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল যে একটি বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মইনুল হোসেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু মি. হোসেন বলছেন, এ ধরনের ধারণা সত্য নয়। দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তিনি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের উপর চাপ তৈরি করেছিলেন বলে দাবী করেন তিনি।
তিনি বলেন, “যেহেতু আমি সে সময় রাজনীতি নিয়ে কথা বলতাম … তারা (রাজনীতিবিদরা) মনে করেছে যেহেতু দুর্নীতির মামলা হচ্ছে সেটা ব্যারিস্টার সাহেব করতেছে। আই ওয়াজ সিরিয়াসলি মিসআন্ডারস্টুড (আমাকে সাংঘাতিক রকম ভুল বোঝা হয়েছিল)। আমাকে টার্গেট করা হয়েছিল।”
উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় অবশ্য সামরিক বাহিনীর পুরো সহায়তা পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন মইনুল হোসেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Discussion about this post