অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অব্যাহত বিদেশী চাপের মধ্যে গত ৪ জুলাই ইলেকশন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা আরেক ধাপ কমিয়ে দিল হাসিনা সরকার। গত বছর থেকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সর্বশেষ আমেরিকার ভিসা নীতি সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে।
বিদেশী চাপের সুযোগ নিয়ে বিরোধীদলগুলো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। এদিকে সরকারি দল আওয়ামীলীগের দাবি বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন করবে বললেও সরকার গত এক বছরের মধ্যে দুই দফা ইলেকশন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে দিলো। প্রথমত এনআইডি’র দায়িত্ব ইসি থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে। দ্বিতীয়ত নির্বাচনে অনিয়ম ও বল প্রয়োগের মতো ঘটনায় কোনো কেন্দ্র বা আসনের ভোট বন্ধ করাসহ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে যেকোনো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এমনিতেই নির্বাচন কমিশন সকল রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের কাছে আস্থা অর্জন করতে পারেনি। আরপিওর এই সংশোধনী নির্বাচন কমিশনকে আরও আস্থার সংকটে ফেলবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে একটি ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।
গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) যে সংশোধনী পাস করা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। এই সংশোধনীর পর নির্বাচন কমিশন কোনো অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে পারবে না; নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না।
সব দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না, তা নিয়ে যখন সংকটে নিমজ্জিত, তখন এই ধরনের একটি উদ্যোগ এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯১ (ক) ধারায় বলা ছিল, কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভয় দেখানো এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে এটি যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো, সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
৯১ (ক ক) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ভোটকেন্দ্র বা সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফল প্রকাশ স্থগিত করতে পারবে, যদি কমিশন নিশ্চিত হয় যে, সেই ভোটকেন্দ্র বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল বল প্রয়োগ, হুমকি, কারসাজি বা অন্য কোনো অসদাচরণের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে দ্রুত তদন্ত শেষে সরকারি গেজেটে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল প্রকাশের নির্দেশনা দেবে অথবা নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের বা পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন বাতিল-পূর্বক নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে।
এ ছাড়া উচ্চ আদালতের রায়েও গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী ফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ইসি এই ক্ষমতা হারিয়েছে।
৪ জুলাইয়ের আরও একটি বিষয়ের সংশোধনী করা হয়েছে যাতে ঋণখেলাপীরা উৎসাহিত হয়। বিষয়টি হলো, পূর্বে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়; কেননা এতে ঋণ খেলাপিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে হলে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
শেখ হাসিনা সরকার চাপের মুখে থেকেও নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতাহীন করে দেওয়া মানে হলো তিনি আবারো ভোটবিহীন পাতানো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
Discussion about this post