অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সহযোগিতায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট ডাকাতি অর্থাৎ দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসে বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ কি করেছে সেটা আর নতুন করে বলার দরকার নাই। দু:শাসন, অপশাসন, অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুন-হত্যা, দুর্নীতি, লুটপাট, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মানুষের জমি দখল ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম কাকে বলে দেশের মানুষ তা সংজ্ঞা ও উদাহরণসহ দেখার সুযোগ পেয়েছে। শেখ মুজিবের দু:শাসন দেখার সুযোগ যাদের হয়নি তারা এখন তার মেয়ে হাসিনার শাসন প্রাণভরে দেখছে।
এক কথায় বললে-শেখ হাসিনার দু:শাসনে দেশের মানুষের প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। এরপরও হাসিনার মন্ত্রীরা বলছে-বাংলাদেশের মানুষ নাকি এখন বেহেস্তের বাগানে প্রবেশ করেছে। কিছুদিন আগে হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছিল-বাংলাদেশের মানুষ নাকি এখন বেহেস্তে বসবাস করছে। এরপর মানুষের সমালোচনার মুখে মোমেন পল্টি খেয়ে বললেন-আমি সেই অর্থে বেহেস্ত বলিনি। আর শনিবার শেখ হাসিনার আরেক মন্ত্রী (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আসাদুজ্জামান খান কুমিল্লায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন-একটা অবস্থা থেকে আমরা বেহেস্তের বাগানে প্রবেশ করেছি। শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বের দ্বারাই এটা সম্ভব হয়েছে।
সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলকে দু:শাসন আর তাদের শাসনামলকে বেহেস্তের সাথে তুলনা করছেন। তাদের দাবি-বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তবাসীদের মতো সুখে-শান্তিতে আছে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলছে?
প্রতিদিন গণমাধ্যম ওপেন করলেই দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, হল দখল, মানুষ হত্যা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের খবরে পত্রিকার পাতা ভরা। এমন কোনো দিন নাই যেদিন হাসিনার সোনার ছেলেদের অপরাধ-অপকর্মের সংবাদ গণমাধ্যমে ছাপা হয়নি।
জেলা শহর ও গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে সর্বদা আতঙ্কে থাকে। বিশেষ করে এই হায়েনাদের ভয়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা বেশি আতঙ্কে থাকে। আর দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এখন পতিতালয়ে পরিণত হয়েছে। এটার নামই কি বেহেস্তের বাগান?
গণতন্ত্রের নামে শেখ হাসিনা দেশে একটা চরম স্বৈরাচারী ও বাকশালী শাসন কায়েম করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক অধিকার শুধু কেড়ে নেয়নি, তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরির অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতারের ভয়ে বাসায় রাত কাটাতে পারে না। বাসায় গেলেই হাসিনার পুলিশ বাহিনী অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা ঠিকমতো ব্যবসা-বাণিজ্যও করতে পারছে না। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে বাসায় না পেলে হাসিনার পুলিশ সদস্যরা পরিবারের লোকদেরকে ভয় দেখায়। এটার নামই কি হাসিনার বেহেস্তের বাগান?
আর বাকস্বাধীনতা? হাসিনার বেহেস্তে মানুষের কোনো বাকস্বাধীনতা নাই। শেখ হাসিনা ও তার এমপি মন্ত্রীরা যা খুশি তাই করবে। এই দেশ তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এখানে রাজনীতি করার শুধু তাদেরই অধিকার আছে। তারা লুটেপুটে খাবে। পেটে না ধরলে বিদেশে পাঠাবে। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। পত্রিকায় লেখা যাবে না। ফেসবুকে পোস্ট দেয়া যাবে না। এক কথায় শেখ হাসিনা ও তার দলের লোকদের দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবে না। আর বললে পরিণাম হবে-চার দেয়ালের কুঠুরি ঘর। আর বেহেস্তের বাগানের দরজায় হাসিনা ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে একটি আইন ঝুলিয়ে রেখেছে। একটু নড়াচড়া করলেই গ্রেফতার করে জেলে। শেখ হাসিনার বেহেস্তের বাগানটা কত সুন্দর না?
Discussion about this post