মাসুদ মজুমদার
লেখক ও বিশ্লেষক
অনেকের ধারণা- ট্রাম্প একজন ক্ষেপাটে ধরনের মানুষ। তার শ্রেণী-চরিত্র বণিকের মতো। ট্রাম্প প্রকাশ্যে একজন ক্যাথলিক, রিপাবলিকান তো বটেই। আসলে এর কোনোটি তিনি নন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কার্যত একজন ইহুদিবাদী বর্ণচোরা মানুষ। তিনি শপথ নিয়েছেন দুটো টেস্টামেন্টের ওপর হাত রেখে। একটি ওল্ড টেস্টামেন্ট বা ইহুদি ধর্মগ্রন্থ নয়তো? বাস্তবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা ইহুদিদের প্রস্তুত করা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। একমাত্র টার্গেট মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে ইসরাইলি পরিকল্পনা মতো বিশ্বব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। পর পর দুই সপ্তাহর দু’টি কলামে বিষয়টি খানিকটা তুলে ধরতে চাই।
প্রথম বিবেচনায় নিতে হবে, রুমানা আহমেদের পদত্যাগ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শপথ নেয়ার মাত্র আট দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুসলিম নারীকর্মী, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুমানা আহমেদ। কেন পদত্যাগ করলেন, সেটা রুমানাই ব্যাখ্যা করেছেন, গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত একটি কলামে।
২০১১ সালে হোয়াইট হাউজে নিয়োগ পাওয়া রুমানা লিখেছেন, ‘১২ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত হিজাব পরি। ওবামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশের সেবায় ট্রাম্পের প্রশাসনে থেকে যেতে মনস্থির করেছিলাম। মনে হয়েছিল, নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীরা ইসলাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকদের জন্য খুব একটা পৃথক বা আলাদা হয়ে দাঁড়াবেন না। কিন্তু তেমনটা হয়নি।
আমার বেশ কয়েকজন আমেরিকান মুসলিম সহকর্মীর মতো আমিও গত বছরের বেশির ভাগ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে আমাদের মানহানি করে কথা বলেছেন, তা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। তার পরও ভেবেছিলাম, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মী হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনে থাকার চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু চেষ্টা করেও আট দিনের বেশি টিকতে পারিনি।’ গত ২৭ জানুয়ারি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর রুমানা দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রুমানা আহমেদ আরো লিখেছেন, ‘যে প্রশাসন আমাকে ও আমার মতো মানুষকে নিজেদের নাগরিক মনে না করে উল্টো হুমকি হিসেবে দেখে, তাদের হয়ে কাজ করতে গিয়ে বেশি দিন টিকতে পারব না, জানতাম’।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের যোগাযোগ উপদেষ্টা মাইকেল অ্যানটনের কাছে পদত্যাগের কারণ বর্ণনা করেছেন রুমানা আহমেদ। তাকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঐতিহাসিক ভবনটিতে একটি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অন্যদের অবমাননা করার পাঁয়তারা চলছে। একজন মার্কিন ও একজন মুসলিম হিসেবে আমার মতামতকে অপমান করা হয়েছে’। রুমানা বলেন, ‘সব শুনে তিনি আমার দিকে চেয়ে থাকলেন এবং কিছুই বলেননি।’ রুমানা আরো লিখেছেন, ‘হোয়াইট হাউজ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নির্দলীয় জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনি বিশেষজ্ঞদের খাটো করেছে প্রেসিডেন্ট সমর্থিত পুরো কাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রে এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে’।
ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝার জন্য এবং তাদের টার্গেট বা অ্যাজেন্ডা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য রুমানার বক্তব্যই যথেষ্ট। বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা কিংবদন্তি ‘রিং-এর রাজা’খ্যাত মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তান মোহাম্মদ আলী জুনিয়রের সাথে আচরণও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। তবে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাজিমাত করতে পারলেন না। ‘শাদির পয়লা রাতের বিড়াল মারা’র ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তার ওপর, নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ, নতুন প্রস্তাবেও নারাজি ইত্যাদি বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। দেশ-বিদেশে জনমত প্রতিদিন বিগড়াচ্ছে। জনমত তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন সময়টা ইরাক আগ্রাসন ও আফগান যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে নেই। সময় এবং পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের যে আগুন জ্বালিয়েছে- সেটা সহজেই নিভবে না। বরং ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণাকেও পুড়িয়ে দিতে পারে। বুশের তত্ত্ব ছিল হয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে, নয় তো বিপক্ষে; মাঝামাঝি কোনো জায়গা নেই। ট্রাম্প সেটাকে ক্রুসেডীয় ভাষায় বলেছেন- মুসলিম বনাম পশ্চিমা স্বার্থ। মুসলিম মানে ‘টেরোরিস্ট’। প্রসঙ্গে একটু পেছনে তাকানো যাক।
১৯৭০ সালে ইহুদি ম্যাসনদের মালিকানাধীন শীর্ষ ৪০টি কোম্পানি একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিভাবে দুনিয়ার অর্থনীতিতে এককভাবে আমেরিকান আধিপত্য বিস্তার করা যায়। আইএমএফ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনাও তারা নিয়েছিল। তাদের কৌশলী খেলায় বিশ্বব্যাংক তাদের অনুগত থাকবে। এরাই ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ এর ধারক-বাহক। ১৭৭৬ সালে এই চিন্তার জোগানদাতা একজন বর্ণবাদী ইহুদি অ্যাডাম ওইজ হপট। তারাই আমেরিকাকে সামনে রেখে ‘গোপন বিশ্ব সরকার’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসেল নামের এক মফস্বল শহরে প্রথম ইহুদি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, মুসলিম ঐক্যের প্রতীক ও রাষ্ট্রীয় রূপ অটোমান সুলতান আবদুল হামিদ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। রাতারাতি ‘কারণ’ খাড়া করা হলো। তার ‘অপরাধ’, ইসরাইলের জন্য ফিলিস্তিনি ভূমি দিতে তিনি রাজি হননি। তাই তুরস্কের উসমানি খেলাফতও বিলুপ্ত করতে হবে। ইহুদিদের সিদ্ধান্ত ছিল, তখন থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ‘খেলাফত’ ধারণাটাও মুছে ফেলতে হবে। এর দায়িত্ব পান ইতালীয় ইহুদি ধর্মগুরু হাকহাম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়েছিল ১৯৫৪ সালে রোমে ক্যাথলিক সম্মেলনে একটি গোপন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। ইইউ বিশ্বস্ততার সাথে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
এর আগে ১৯৪৫ সালে রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্ট্যালিন রাশিয়ার ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা বন্দরে বসে ‘অ্যা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের’ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ৩২তম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর একাধিপত্য বা একক পরাশক্তির যুগ শুরু হয়। জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির তৎকালীন তিন প্রধানমন্ত্রী- কনরাড আডেনায়ের, রবার্ট শ্যুমান ও ডিগাসপেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোক্তা। তিনজনই ক্যাথলিক কিন্তু ইহুদিবাদের বর্ণচোরা মুখপাত্র। গোপন বিশ্ব সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সমন্বয় হয় পরে। পরিকল্পিতভাবেই গোপন বিশ্ব সরকার ডলারকে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে স্বর্ণ মজুদের বাইরে নিয়ে যায় ১৯৮৮ সালে। গোপন বিশ্ব সরকার ও নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এক সূত্রে গাঁথা। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা শক্তির দায়বদ্ধতা এখানেই। এর প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন গুরিয়ন নীল নদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করেছিলেন বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্য। ১৯৩৩ সালে রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডলারের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ এবং তরল সোনা খ্যাত মুসলিম বিশ্বের তেলসম্পদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কার্যকর উদ্যোগ নেন। একসময় ডলারের ওপর পিরামিডের প্রতিকৃতি গোপন বিশ্বসরকারের ধারণা পুষ্ট করেছিল। একই সাথে, রুজভেল্টের ইহুদি ধারণার সাথে সমন্বিত চিন্তার ধারণা মিলে যায়। এসব বিষয় স্ট্যালিন জানতেন। এখন জানেন ও মানেন ট্রাম্প। ব্রিটেন জানে পূর্বাপর সব তথ্য।
এখন আরো নিকট-অতীতের স্মৃতিচারণ করা সম্ভব। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১। অন্য ৩০ দিনের মতোই একটি দিন, কিন্তু আলাদা। নিউ ইয়র্ক শহরের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র- যা কিনা পুঁজিবাদী বিশ্বের অহঙ্কার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে গেল। পেন্টাগনকে ভাবা হয়, পরাশক্তির সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের প্রাতিষ্ঠানিক পীঠস্থান। চোখের পলকে তা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে গেল। কেউ ভাবেন- এটা ঘটনার শুরু, অনেকের ভাবনা- এটা ঘটনার উপসংহারপর্ব। যুক্তরাষ্ট্র ভাবল, তারা আক্রান্ত। মার্কিন বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করলেন- এত দিন যুক্তরাষ্ট্র আঘাত হানত অন্যের ভুঁইতে, রণাঙ্গন হতো মানচিত্রের ভিন্ন ভিন্ন স্থান; আজ খোদ মার্কিন মুল্লুকে আক্রান্তের আহাজারি, শোকের মাতম, ভীতি ও আতঙ্ক, ক্ষতির বেশুমার হিসাব। অথচ এত বড় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ইহুদি লবির কেউ নেই। কারণটা অনুসন্ধানের দায় নিলো না কেউ। কেন?
তাৎক্ষণিক যুক্তরাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষে দাঁড় করাল। তার নাম ওসামা বিন লাদেন। উচ্চশিক্ষিত ধনাঢ্য সৌদি নাগরিক। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামি ‘জাজিরাতুল আরবে’র স্বপ্ন দেখার অপরাধে নির্বাসিত রাষ্ট্রবিহীন একজন যাযাবর। বিন লাদেনকে উপলক্ষ করে আক্রান্ত হলো আফগানিস্তান। আরোপিত যুদ্ধে তালেবান সরকার উচ্ছেদ হলো। এই বিনলাদেন আমরা চিনলাম আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময়। মার্কিনিরা বিনলাদেনকে সে সময় ‘হিরো’ বানিয়ে উপস্থাপন করেছে। পরে সাজিয়েছে ‘খলনায়ক’। অবশেষে ‘জিরো’ করে দিয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক আফগান আগ্রাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মুসলিম শক্তিকে কাজে লাগিয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তারপর যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান পাল্টে ফেলে।
ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির সাথে অসম যুদ্ধে তালেবানরা হেরে গেল, কিন্তু হার মেনে নিলো না। এরপর শুরু হলো ‘সন্ত্রাস’ ছড়িয়ে পড়ার পালা। তারপর পাকিস্তান থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে আফ্রিকা- সর্বত্র একধরনের অস্থিরতা জন্ম নিলো। প্রতিক্রিয়ায় দেশে দেশে জন্ম নিলো কথিত ‘জেহাদি’, ‘জঙ্গি’, আত্মঘাতী এবং নানা নামের সশস্ত্র ক্যাডার। ইসরাইলের সাথে আরবদের যুদ্ধের সময় মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। অনেক কমরেড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লড়েছেন। সেই যুদ্ধফেরতরাও অভিজ্ঞতা জমা দেননি। রবাট ফিস্ক বললেন- শোষণ-বঞ্চনার উদর থেকে প্রতিবাদী নামের ‘সন্ত্রাসীদের’ জন্ম দিলো যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র কখন কাকে মুক্তিযোদ্ধা বানাবে, কখন কাকে সন্ত্রাসী বানাবে, সেটা তাদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডার অংশ।
সাদ্দাম-গাদ্দাফিরা ‘নাই’ হলেন কেন? নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এবং গোপন বিশ্ব সরকারকে অস্বীকারের ‘ধৃষ্টতা’ প্রদর্শন করেছেন বলেই। ডলারের প্রাধান্য চ্যালেঞ্জ করার বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল। উপসাগরীয় সঙ্কট তো মোল্লা ওমর ও বিন লাদেনরা জন্ম দেননি। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে থিওডর হেরজেল ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনি ভূমিতে অটোমান খলিফা সুলতান আবদুল হামিদকে জমি দিতে বলেছিলেন; বিনিময়ে ইউরোপের কাছে দায়বদ্ধ সব ঋণ মওকুফের প্রস্তাব ছিল। সুলতানের জবাব ছিল- ‘শহীদের রক্তের বিনিময়ে কেনা ভূমি কখনো অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হবে না’। সেটাই হলো খেলাফত ধ্বংসের জন্য পশ্চিমা শক্তির অজুহাত সৃষ্টির প্রেক্ষাপট। বানরের পিঠা ভাগের মতো মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পাল্টে দিলো সেই নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার ও গোপন বিশ্ব সরকারের প্রতিনিধিরা। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, ‘গড’ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- তাদের জন্য গডের বরাদ্দ করা প্রতিশ্রুত জমিনে জায়গা করে দেবেন। সেই প্রতীক্ষিত বা প্রতিশ্রুত ভুঁই নাকি ফোরাত থেকে নীল নদ পর্যন্ত। রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালেই পিরামিড অবয়বকে ইহুদিবাদের সিম্বল হিসেবে পশ্চিমাদের মগজে স্থান করে দিয়েছেন। এটা ইহুদি ধর্মনেতা রাবাইদেরই নির্দেশনার ফল। পিরামিডের নিচে লেখা হলো নোভাস অরডো সেডোরাম। এটাই নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রতীকী ধারণার বহিঃপ্রকাশ। পরবর্তী সময় এ ধারণায় পরিবর্তনের ছাপ আছে। তবে ডলারে ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’ বহাল আছে ক্যাথলিক ও ইহুদি ধারণার বিশ্বাস সমন্বয় করতে।
‘বিনেই ব্রিথ’ ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ইহুদি সংগঠন। এখানে তরুণদের রিক্রুট করা হয়। এর মূল কাজ বিশ্বের সব ইহুদি স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘এলেপ জেডিক এলেপ’। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় হল্যান্ডের বিল্ডারবার্গ হোটেলে। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহর থেকে প্রকাশিত নিউ ন্যাশন ম্যাগাজিন ১৯৬৪ সালে গোপনীয় সব ইহুদি তথ্য প্রকাশ করে দেয়। ১৯৭৫ সালে প্যারিসে প্রকাশিত হয় বার্নাড গ্রেসড প্রকাশনীর মাধ্যমে তাদের একটি নিজস্ব পরিকল্পনার বই। কারো বিশদ জানার ইচ্ছে থাকলে খতিয়ে দেখতে পারেন।
ইহুদি কিংবা ক্যাথলিকদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। সব ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান করা আমাদের বিশ্বাসের অংশ। টুকরো টুকরো কিছু তথ্য দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা পরস্পর বিপরীত মেরুর ধর্মে বিশ্বাসী। তবে খ্রিষ্টানদের ধর্মবিশ্বাস হিতোপদেশনির্ভর, তাই দৈনন্দিন জীবনে তারা ইহুদি ‘শরিয়ত’ ও সংস্কৃতিকে অনুশীলন করে। যেমন বৌদ্ধরা হিন্দু নয়; কিন্তু তাদের ধর্ম হিতোপদেশনির্ভর হওয়ার কারণে হিন্দু আইন ও সংস্কৃতি তাদেরকে কাছে টানে। তাই ট্রাম্প যা করছেন, সেটা হলো- ইহুদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। তার মুসলিমবিদ্বেষ বা ইসলামোফোবিয়ার গোড়ার কথাও এটাই। ইসরাইল নীতি ও ইহুদিদের পরিকল্পনার অনুসরণ। এই অনুসরণই গণ-ইচ্ছার বিপরীতে ট্রাম্পকে জিতিয়েছে। সর্বশক্তি দিয়ে টিকিয়ে রাখতেও চাইবে। ব্যতিক্রম যা, সেটা হবে মার্কিন ও দুনিয়ার সব গণমানুষের ইচ্ছার ফল। থিওডর হেরজেলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে ট্রাম্প সরে দাঁড়ালে তার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। কারণ বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও মিডিয়া ইহুদিরাই নিয়ন্ত্রণ করে।
এই লেখার উপসংহার টানবো পরের লেখায়। আশা করি, দ্বিতীয় পর্ব পড়ে পাঠক নিজেই একটা উপসংহার টানতে পারবেন।
পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব: ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন অ্যাজেন্ডা
Discussion about this post