মিনার রশিদ
বছর কয়েক আগে এক ইন্দোনেশিয়ান নায়িকা সুদূর মিশরে গিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে নিজের সতীত্ব মেরামত বা পুণরুদ্ধার করেছিলেন। এর আগে তিনি দুই বার বিবাহ এবং হাফ ডজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিভ টুগেদার করেছিলেন। হঠাৎ তার মনে ভাবনার উদয় হলো যে পরবর্তী স্বামীর জন্যে এই সুবন্দোবস্তটি করা উচিত! সেই নায়িকা এবং তার পরবর্তী স্বামীর তরে সেটা ছিল এক অন্য রকম আত্মতৃপ্তি।
একই রং এবং স্বাদ সহ সেই আত্মতৃপ্তি হুবহু পান এদেশের ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ এবং হানিফ নামধারী কিছু হোমোসেপিয়েন্স! উক্ত নায়িকার সতী হওয়ার বাসনা এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের গণতান্ত্রিক হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার বাসনায় একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে! কোনোমতে অপারেশন করে একটি পর্দা লাগিয়েই ঐ নায়িকা যেমন নিজের অতীত সকল কীর্তিকলাপ ভুলে গিয়ে নিজেকে সতী হিসাবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। আওয়ামী লীগেরও খায়েশ হয়েছে বা মতান্তরে জরুরত দেখা দিয়েছে এই নায়িকার কিসিমে নিজেকে গণতান্ত্রিক হিসাবে ভাবতে বা তুলে ধরতে। উক্ত নায়িকা তার পরবর্তী বরকে যেমন গর্দভ ভেবেছিল, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ এবং বিশ্বনেতাদের তেমনই উল্লুক ভেবেছে!
সেই তৃপ্তি নিয়েই হানিফ, হাছান মাহমুদ, ওবায়দুল কাদের গণ অনবরত তাদের গণতান্ত্রিক (?) সরকারের গুণকীর্তন করে যাচ্ছেন! দুদিন আগে হানিফ বলেছেন , এই দেশে আওয়ামীলীগই একমাত্র দল যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে! এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের জন্যে এত্তো কিছু করলাম, দেখি এখন দেশের মানুষ কী করে! এসব কথা উদগীরণের পর পাবলিকের রিএকশন নিয়ে চিকনা বুদ্ধির এই বাজিকররা মোটেই চিন্তিত নয়!
বাইরের স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে আসল গণতন্ত্র ধ্বংস করে নকল বা কৃত্রিম গণতন্ত্র অপারেশন করে জোড়া লাগাতে চাচ্ছে! সংসদে তথাকথিত গৃহপালিত বিরোধীদলটি গণতন্ত্রের সেই সতীচ্ছেদ পর্দা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মাঝখান থেকে এক ডক্টর এবং আরেক ডাক্তারের বদৌলতে বিএনপি থেকেও গুটিকয় কুমির ছানা যোগ দিয়ে ঐ পর্দার পুরুত্ব একটু বাড়িয়েছে! এর ফলে এই বাজিকররা ডেমোক্রেসি ইনডেক্সে কিছুটা এগিয়েছে অর্থাৎ হানিফদের গণতন্ত্রের সতীচ্ছেদ পর্দাটিকে আরেকটি পোক্ত করেছে বিএনপির এই কুমিরছানারা।
এই বাজিকরদের জন্যে দু:সংবাদটি হলো যে পকেটে যত খেলা ছিল সব খেলা খেলে ফেলেছে। এবার বুঝে ফেলেছে, আগের সেই সব ভেল্কি আর কাজে লাগবে না। যেভাবেই হোক বিশ্ববাসীকে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখাতে হবে। আর সেজন্যেই দরকার এবার বিএনপিকে। ৭০/৮০টি সিট দিয়ে বিএনপিকে সংসদে আনতে পারলে অতীত দিনের সকল অপকর্ম ঢেকে ফেলা যাবে।
সেজন্যে সরকারী বেসরকারি সকল আওয়ামী মেশিনারিজ কাজে নেমে পড়েছে! সিইসির মুখ থেকে ভালো ভালো কথা বলিয়ে, সরকারের সাথে কপট মত পার্থক্য দেখিয়ে বিএনপির মন নরম করতে চাচ্ছে! আওয়ামী গোঁয়ার হিসাবে বিবেচিত এক সাংবাদিকের মুখ দিয়ে নিশিরাতের ভোটের কথা স্বীকার করানো হয়েছে! ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এমন বিদঘুটে সত্য কথা বলার পর জ.ই. মামুনকে কোনো যুবলীগ বা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয় নাই। কারণ তারা বুঝেছে জ.ই. মামুন কোন মহৎ উদ্দেশ্য থেকে এই কথাটি বলেছে!
শুধু মাত্র দেশের ভেতরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা নন, বিদেশে স্বামী এবং ভাসুর যারা রয়েছে তাদেরকেও অত্যন্ত পেছন থেকে কাজে লাগানো হতে পারে। এই ব্যাপারে মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তাঁর গত লেখাটিতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সতর্ক করেছেন।
এখন প্রশ্ন, বিএনপি কি সত্যি সত্যি সরকারের এই সতীচ্ছদ পর্দাটির সফল অপারেশনে সহায়তা করবে?
বিএনপি থেকে আগের কুমির ছানাদের মত কেউ কেউ গিয়ে সরকারের ঐ সতীচ্ছেদ পর্দার পুরুত্ব বাড়াবেন সেই সুযোগটিও কমে গেছে। বিএনপি যে বিষয়টি নিয়ে অবগত এবং সতর্ক- সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, আসন ভাগের নির্বাচনে যারা যাবে সরকার ও তাদের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান জানিয়ে দিয়েছেন, এই সরকারের অধীনে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা জাতীয় বেঈমান হিসাবে চিহ্নিত হবে। এর পর তারেক রহমান বা বিএনপির পক্ষে আর এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের উপায় নেই। যদি করেন তবে বিএনপি বা তারেক রহমানের রাজনীতি এখানেই বোধহয় শেষ হয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় একটা দামী কথা বলেছিলেন, সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামীলীগকে বিশ্বাস করা যায় না। আওয়ামীলীগ এমন একটি দল প্রয়োজনের সময় যা কিছু তাই করতে পারে।
এই বোধ-ভাবনা–অভিজ্ঞতাটি আমাদের সমাজ ও রাজনীতির সকল স্তরে পৌঁছে গেছে। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে বুঝে গেছে আওয়ামী লীগ এবং তাদের নেত্রী আসলে কী জিনিস! সর্বশেষ এক সেনাপ্রধানকে একই ভাবে ছুঁড়ে ফেলেছে। আসন্ন বিপদ দেখে আদরের বেয়াই এবং মেয়ে জামাইকেও একই ভাবে ছুঁড়েছে!
কাজেই মহা নায়িকার সতী সাজার খায়েশ এবার বোধ হয় আর পূরণ হচ্ছে না!
লেখকঃ বিশিষ্ট কলামিস্ট
Discussion about this post