অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
করোনা মহামারির মধ্যে প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে৷ চলতি বছর এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনার সাথে এখন আরেক আতঙ্ক ডেঙ্গু। সম্প্রতি ডেঙ্গু আরও বেশি বিস্তার ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই করোনার মতো রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। ইতিমধ্যে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
আর রাজধানী ঢাকায় মহামারী করোনার চেয়েও মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক বেশি দেখা দিয়েছে। এখানে প্রতি ঘণ্টায় ৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৫৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র একজন ঢাকার বাইরে। বাকী ১৫২ জনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার।
করোনায় আক্রান্তরাই হাসপাতালে সিট পাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার ডেঙ্গু মানুষের দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জনমনে হস্যরস করে বলছেন, বাইরে করোনার ভয় ঘরে ডেঙ্গুর ভয়। এখন আছে কি কোন উপায়?
উপায় যাদের হাতে তাদের এই নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ঢাকার দুই মেয়র এসবের দিকে নজর না দিয়ে তারা ব্যস্ত সময় পার করেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মতো সভা-সমাবেশে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে তারা দুই সিটি করপোরেশনের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এমনকি মশার উপদ্রব কমাতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হতো করোনার অযুহাত দেখিয়ে গত এক বছর ধরে সেটাও বন্ধ রাখা হয়েছে।
তারা বলছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদন করা গেলে এই মশার উপদ্রব এত বৃদ্ধি পেত না। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা শহরের সর্বত্রই এখন কিউলেক্স মশার মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। যার ফলে রাজধানীবাসীর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। মশার কামড়ে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছে না। মশার কামড়ে জ্বর থেকে শুরু করে অন্যান্য রোগের পরিমাণ বাড়ছে। যা শিশু এবং বয়স্কদের জন্য ভয়াবহ। এছাড়াও মশার প্রজনন যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মার্চের শেষে কিংবা এপ্রিল-মে মাসে এর প্রজনন ৩-৪ গুণ বেড়ে যাবে। যা রাজধানীবাসীর জন্য ভয়াবহ ও হুমকিস্বরূপ।
নাগরিক সেবা বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে শেখ হাসিনা ঢাকা সিটিকে দুইভাগ করেছিল। কিন্তু নাগরিক সেবা কি বৃদ্ধি পেয়েছে?
দক্ষিণ সিটির প্রথম মেয়র ছিল সাঈদ খোকন। ৫ বছরে সে কিছুই করেনি। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। সাঈদ খোকনের দুর্নীতি-দু:শাসনের কারণে পরের নির্বাচনে শেখ হাসিনা তাকে বাদ দিতে বাধ্য হন। এরপর মেয়র বানানো হল শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ফজলে নুর তাপসকে। নির্বাচনের আগে তাপস বলেছিল-মেয়র হতে পারলে উন্নয়নের বন্যা বয়ে দিবে। কিন্তু, মেয়র হওয়ার পর আর কোনো খবর নাই। নগরীর উন্নয়ন না করে তিনি তার ব্যাংকের উন্নয়ন করছেন। সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা মেয়র তাপস তার মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে রেখে ব্যবসা করছে। নগরীর জলাবদ্ধতাও দূর করতে পারেনি, মশাও নিধন করতে পারেনি।
এরপর ঢাকা উত্তর সিটির অবস্থাও একই। একটু বৃষ্টি হলেই অলি গলি দিয়ে আর হাটা যায় না। গলির রাস্তাগুলো নর্দমায় পরিণত হয়। আর মশার কামড়ে তো মানুষ অতিষ্ট। কয়েক বছর ধরে শুধু মুখে বলেই যাচ্ছে যে, মশা নিধনে আমরা ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। এখণ প্রশ্ন হল-এত ক্রাশ প্রোগ্রামের পরও মশা মরছে না কেন? বরং ডেঙ্গু মশা আরও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার পরিণত এখন প্রতিদিন দেড়শ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
Discussion about this post