অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ মুজিবের জন্মবার্ষিকীর উৎসবের নামে সময় নষ্ট করে সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে দিয়ে এখন আবার লকডাউনের নামে আরেক তামাশা শুরু করেছেন শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞাসহ বিবিশষ্টজনেরা এক মাস আগ থেকেই সরকারকে বলেছিল-দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। করোনা ছড়িয়ে পড়লে পরে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা কারো কথাই পাত্তা দেননি। তিনি মজেছিলেন পিতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। এই সময় করোনা সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দেশে যে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সেটা মানুষ ভুলেই গেছে। কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, বজায় রাখছে না সামাজিক দূরত্ব। এছাড়া সভা-সমাবেশ আর মিটিং-মিছিলতো ছিলই। মানুষের এসব বেপরোয়া চলাফেরা নিয়ন্ত্রণেও সরকারের ছিল না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। কিন্তু কোনো প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই করোনা নিয়ন্ত্রণে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
লকডাউন ঘোষণা করলে সাধারণ মানুষের কি হবে? মানুষ কিভাবে অফিসে যাবে? ব্যবসায়ীরা কি করবে? ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কি করবে? গার্মেন্টস শ্রমিকরা কিভাবে অফিসে যাবে? খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের খাবার কোথায় থেকে আসবে? এসব নিয়ে সরকার কোনো চিন্তা করেনি। হুট করে বলে দিল-এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন পালন করা হবে।
লকডাউনের নামে তামাশা
করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সাত দিনের লকডাউনের আজ প্রথম দিন৷ কিন্তু প্রথম দিনেই যে অবস্থা দাড়িয়েছে এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ কমার বদলে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
যদিও সরকারের পক্ষথেকে লকডাউনের যে নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে তার চিত্রই দেখা মেলেছে আজকের দিনে।
দেখা গেছে, সরকার লকডাউনের যে নীতিমালা ঘোষণা করেছে সেখানে গণপরিবহন ছাড়া অন্যান্য সব কিছুই সীমিত পরিসরে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে।
নীতিমালায় জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস আদালত সীমিতি পরিসরে চালু থাকবে৷ কিন্তু জরুরি সেবা দেয় এমন শিল্পকারখানা বিশেষ করে পোশাক কারখানা চালু থাকবে৷কাঁচাবাজার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চালু থাকবে৷ খাবারের দোকান ও হোটেল রোস্তোরাঁ খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না৷ তবে খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারবেন গ্রাহকরা৷ বিদেশ থেকে যাত্রীরা বাংলাদেশে আসতে পারবেন৷ ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলা না হলেও তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নাই৷
এছাড়া বলা হয়েছে, ওষুধের দোকান সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, রেল ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে৷ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলবে৷
চালু থাকবে সব ধরনের জরুরি সেবা এবং জরুরি পণ্য পরিবহন৷শুধু তাই নয় চলবে বইমেল ও বঙ্গবন্ধু গেমসও।
কিন্তু এই লকডাউনের খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের মানুষ এখন গ্রামে ছুটছেন৷ লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে জনগণের স্থান পরিবর্তনে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অনেকেই শহর থেকে গ্রামের দিকে ছুটছেন৷
এদিকে শপিংমল এবং সাধারণ দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও তা মানতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা৷রবিবার নিউ মার্কেট, গাউসিয়াসহ ওই এলাকার মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন৷ এসময় তারা যানবাহনও ভাঙচুর করেন। আজ লকডাউনের মধ্যেও চলছে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ।
লকডাউনের প্রথম দিন দেখা গেছে, রাজধানীর অলিগলি থেকে রাজপথ কোথাও লকডাউনের প্রভাব পড়েনি। শুধু মাত্র গণপরিবহন চলাচল ছাড়া রাজধানীর সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। কোথাও কোথাও যানজটও দেখা গেছে। এমনকি রাজধানীর অলিগলিগুলো আগের চেয়ে আরও বেশি জমজমাট ছিল। ইচ্ছেমতো লোকজন ঘোরাফেরা করছে। নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও সব ধরনের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। মাস্ক ছাড়াই অবাধে চলছে বেশিরভাগ লোক। কোথাও কোথাও উঠতি বয়সী তরুণরা আড্ডা দিচ্ছে।
ভরদুপুরেও রাজপথের কোথাও কোথও যানজট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর প্রগতি স্মরণীতে যানজট লেগেই ছিল। এছাড়া উত্তর বাড্ডার অলিগলিতে সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল অনেক।
যাত্রাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যত্রতত্র দোকান বসেছে বিভিন্ন ধরনের সবজির। কিছু ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতাদের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী খোলা জায়গায় নিত্যপণ্যের বাজার বসানোর কথা থাকলেও মহাখালীর কাঁচাবাজারে প্রতিদিনের মতই বেচা-কেনা চলছে।
লক্ষণীয় বিষয় হল- এসব দেখার জন্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীরও কোনো তৎপরতা ছিল না। এ যেন বিরোধীদলের হরতালের মতো। কিছু যানবাহন বন্ধ থাকে-বাকী সবই খোলা থাকে।
এমন লকডাউনে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা
এদিকে লকডাউন বলতে রাজি নন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ তার নিজের ইচ্ছামত লকডাউনের একটি সংজ্ঞা তৈরি করেছে৷ এর সাথে সায়েন্টিফিক লকডাউনের কোনো মিল নাই। ‘‘এর ফলে করোনা আরো ছড়াবে৷’’
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জানান, কাঁচাবাজার খোলা থাকলে মানুষ বাজার করতে যাবে৷ হোটেল খোলা থাকলে মানুষ খাবার কিনতে যাবে৷ পোশাক কারখানা যেহেতু খোলা থাকবে, হাজার হাজার শ্রমিক বাইরে কাজে যাবেন৷ দেশের বাইরে থেকেও লোক আসবেন৷ আর সবচেয়ে বড় কথা ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে মানুষ এখন গ্রামে যাচ্ছেন এবং সাত দিন পর তারা ফিরে আসবেন৷ এর মানে হলো কয়েক লাখ মানুষ এই এক সপ্তাহে আসা-যাওয়া করবেন৷ ফলে লকডাউনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে ঘরে আটকে রাখা, বিচ্ছন্ন রাখা তা সফল হচ্ছেনা৷ বরং মানুষের চলাচল আরো বেড়ে যাচ্ছে গ্রামে যাওয়ার কারণে৷
এ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এই লকডাউন করোনা সংক্রমণ না কমিয়ে বরং করোনা সহায়ক হবে৷ কারণ জনসমাগম এবং মানুষের চলাচল বা সংস্পর্শে আমার যথেষ্ঠ সুযোগ থাকছে৷ আর বড় বড় শহর থেকে এখন করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন৷ ফলে যে ২৪টি জেলায় করোনা সংক্রমণ কম আছে সেই জেলাগুলোতে আরো বেড়ে যাবে৷’’
চিকিৎসকরা বলছেন, এটা অবৈজ্ঞানিক লকডাউন৷ নিয়ম নীতি মেনে এটা না করায় তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে৷ গত বছর সাধারণ ছুটির নামে যে লকডাউন করা হয়েছিল তাও ছিলো অপরিকল্পিত৷ এবারও তাই৷ আর এই লকডাউন করা হচ্ছে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে৷ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটা নিয়ে কোনো ব্রিফিংও করেননি৷ শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷
Discussion about this post