অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ফ্যাসিবাদের আরেক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন শেখ হাসিনা। তার মূল লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন নয়, দেশের উন্নয়ন নয়, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়, মানুষের ভোট ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়। হাসিনার টার্গেট হলো তার বাবা শেখ মুজিব ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। শেখ মুজিবকে মানুষের ঘারে চাপিয়ে দেয়ার জন্য যা যা করা দরকার ছিল তার কন্যা সবই করেছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিব পাক সেনাদের হাতে বন্দী হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শেখ মুজিব নিজ থেকেই পাক সেনাদের হাতে ধরা দিয়েছেন। ধরা দেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ড. কামালসহ আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মুজিব জানতেন রাতে পাক সেনারা হামলা করবে। ড. কামালসহ অন্যদেরকে বললেন-সতর্ক থাকতে। কিন্তু তখন পর্যন্ত স্বাধীনতার ঘোষনার বিষয়ে কিছুই বলেন নি। ড. কামালও আজ পর্যন্ত কোনো দিন বলেননি যে, বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
২৫ মার্চের রাতে পাক সেনারা বর্বর হামলা চালানোর পর পুরো জাতি দিক বিদগ্ধ ছুটতে থাকেন। নির্দেশনা দেয়ার মতো কোনো লোক ছিল না। সেই কঠিন সময়ে চট্টগ্রামের কালোর ঘাট থেকে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এদেশের মানুষ। যা ইতিহাসের পাতায় অক্ষত অবস্থায় লিখা আছে। জিয়াউর রহমানকেই এদেশের মানুষ স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জানে।
কিন্তু, ২০০৯ সালে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ঘারে বন্দুক রেখে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে বিচারপতিদেরকে রায় দিতে বাধ্য করলেন। আর এখন সেটাকেই বলা হচ্ছে-আদালতের রায়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক।
আদালতের এই রায়ের পর থেকেই সারাদেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে যত স্থাপনা ছিল শেখ হাসিনা সবই মুছে ফেলছে। আর জিয়াউর রহমানকে যারা স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করছেন, তাদের নামে হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হলে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।
সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। দুইজন শিক্ষককেই শেখ হাসিনা চাকরিচ্যুত করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, “আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে ত্রাতারূপে আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।”
নিবন্ধের আরেক জায়গায় স্বাধীনতার পরের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোর্শেদ হাসান খান লিখেছেন, “দেশবাসী দেখলো শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করে নিজেই যেন দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭২ থেকে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে বাকস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না।”
ইতিহাস বলে, মুর্শেদ হাসান খান যা লিখেছেন এখানে কোনো প্রকার ইতিহাস বিবৃতি ঘটেনি। তিনি সঠিক তথ্যই তুলে ধরেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলও তার লেখা বইয়ে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। এমনকি মেজর কলকাতা গিয়ে নিজেই দেখলেন-আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অন্যরা কলকাতার বিলাস বহুল হোটেলে বসে তাজ খেলছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য সাধারণ মানুষ জীবন দিচ্ছেন, আর আ,লীগ নেতারা কলকাতা গিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত ছিলেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল-আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন ছিল জহির রায়হানের কাছে। এসব ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাকে চিরতরে গুম করে ফেলে মুজিব বাহিনীর লোকেরা।
তারপরও, মুর্শেদ হাসান খান লেখাটি প্রত্যাহার করে ভুল স্বীকার করেছেন। কিন্তু, এপররও তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন।