অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
করোনা যেন ক্ষমতাসীন দলের জন্য অভিষাপ হয়ে এসেছে। করোনাকালের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে এক একটি বঙ্গপাল। যদিও আওয়ামীলীগের নেতা নেত্রীদের নিয়ে এসব অপকর্ম বেশ পুরোনো। তবে নতুন করে সাধারণ মানুষের মনে দাগ কেটেছে করোনার মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও আওয়ামীলীগের এসব তামাশা দেখে।
সাহেদ, সাবরিনা, পাপলুর পরে এবার নতুন করে সমালোচনায় এসেছেন অওয়ামী লীগের দুই নেত্রী। একজন নকল মাস্ক বিভিন্ন হাসপাতালে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাথ লাখ টাকা অন্যজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহান নকল মাস্ক সরবরাহ করতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) বিভিন্ন হাসপাতালে। অন্যদিকে নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা মহিউদ্দিন।
শুরু থেকে বেরিয়ে আনছে মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। সরকারের দালাল মিডিয়াগুলো পরিকল্পিতভাবে এই মাস্ক কেলেংকারির ঘটনায় জামায়াতকে জড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছে। মাস্ক সরবরাহকাী প্রতিষ্ঠান জেএমআই এর মালিককে জামায়াতের লোক বানিয়ে ইত্তেকপত্রিকাসহ সরকারপন্থী কয়েকটি পত্রিকা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে।
কিন্তু সত্যকে কি আর গোপন রাখা যায়? অবশেষে মাস্ক কেলেঙ্কারিতর পেছনেও সেই আওয়ামীলীগ নেত্রীর নাম। তিনি আগে ছাত্রলীগ নেত্রী থাকলে ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেত্রী এই শারমিন জাহান।
জানা যায়, শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগের কমিটিতে একই উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন তিনি।
ববঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
দেখা গেছে, করোনা পরীক্ষায় প্রতারণা করে যারা গ্রেফতার হয়েছেন সাহেদ-সাবরিনা দুইজনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোক। সর্বশেষ মাস্ক কেলেঙ্কারিতেও ধরা খাইলেন আরেক আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমিন জাহান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শারমিন জাহান তার প্রতিষ্ঠান অপারিজতার নামে মাস্ক সরবরাহের অর্ডার নিয়েছিলেন। নকল মাস্ক দিয়ে ধরা খেয়ে এখন অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি তাকে বাচানোর জন্য ক্ষমতাসীন দলের উপর মহল থেকেও তদবির করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে উপহার পাঠানোর নামে গত দুই মাসে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নাইজেরিয়ান একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের অন্যতম একজন বাংলাদেশি ভুয়া নারী আওয়ামী লীগ নেত্রী ফারজানা মহিউদ্দিন।
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে, নাইজেরিয়ান নান্দিকা ক্ল্যামেন্ট চাকেনগুয়ে (৩২), ক্লিটাস আচুনা (৩১), ওনইয়ানক্লুভ টাইমটি চিনোংড়ে (৩০), একিনি উইজডম (৩০), চিগোজি (৩০), এভেন্ডে গ্রাব্রিয়েল ওবুনা (৩০), সেলাস্তিন পেট্রিক ওবিয়াজুলু (৩০), মোরডি নানদি কোলিন্স (৩০), ওরডু চুকেয়দু সামি (৩০), এন্দুবুয়েকোন সমেয়ানা (৩০), এনজেরেম প্রিসিয়াস ইকেমে (৩০), এনওক উইজডম চিকওয়াদো (৩০) এবং বাংলাদেশি রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন (ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা),।
এদিকে ঐ প্রতারক নেত্রীকে গ্রেফতারহওয়ার পর থেকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাদের সাথে তার তার অন্তরঙ্গ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সচেতন মহল মনে করছেন, প্রত্যেকটা ঘটনার সঙ্গেই সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত। তা না হলে তাদের পক্ষে করোনাকালে এসব করা সম্ভব হতো না। শুধু তাদেরকে গ্রেফতার করলেই হবে না। তাদের পেছনে কারা কারা আছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।