অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাবেক কেবিনেট সচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হোসেন। ড. সা’দত হোসেন শুধু একজন মেধাবী আমলা ছিলেন না, তিনি এদেশের মানুষের কাছে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের একজনদোসর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর যে কয়জন আমলা অতি সুবিধাবাদী ও চরম ডিগবাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তার মধ্যে ড. সাদত ছিলেন অন্যতম।
কিন্তু দুর্ভগ্যের বিষয় হলো-তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থীদের অনেকেই তার মৃতুতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। তারা তার নামের সঙ্গে বিভিন্ন বিশেষণ যোগ করে শ্রদ্ধা-ভালবাসা জানাচ্ছে আর চোখের অশ্রু ফেলছে।
কে এই সা’দত ? কি তার পরিচয়?
ড. সা’দত হোসেন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের কেবিনেট সচিব ছিলেন। খালেদা জিয়া তাকে নিজের আদর্শের লোক মনে করেই গুরুত্বপূর্ণ এই পদটিতে বসিয়েছিলেন। সব কিছু তখন ঠিকঠাক মতই চলছিল। কথা আছে-ওস্তাদের মাইর নাকি হয় শেষ রাতে। ড. সা’দত ও বিএনপি-জামায়াতকে মাইরটা দিয়ে গেছে শেষ রাতেই।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতেই মূলত দেশে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের কথিত তত্ত্বাবধায়স সরকারের নামে সেনা শাসন শুরু হয়। তখনই পল্টি মারেন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সাবেক এই কেবিনেট সচিব ড. সা’দত। তিনি প্রকাশ্যে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সেনা শাসনকে সমর্থন দেন।
২০০৭ সালের মে মাসে শেরাটন হোটেলের বকুল হলে শিক্ষা সংক্রান্ত একটি সেমিনার আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আতাউর রহমান। যিনি ওয়ান ইলেভেনের জবরদখলকারী সরকারের অন্যতম সমর্থক বুদ্ধিজীবী ছিলেন। সেমিনারে সাবেক দুই শিক্ষামন্ত্রী এএইচকে সাদেক ও ড. ওসমান ফারুক দুইজনই অংশ নেন। সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলও ছিলেন। সেদিন ওই সেমিনারে ড. সা’দত জবরদখলকারী সেনা সরকারকে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার ফল আখ্যায়িত করে তাদের সমর্থনে এমন সব বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়েছিল শিগগিরই বড় কোন পদে পদায়ন পেতে যাচ্ছেন তিনি। দেরি হয়নি, দুই তিনদিনের মাথায় তিনি পিএসসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
তারপর খেলা শুরু
পিএসসির চেয়ারম্যান হওয়ার পরই আসল খেলাটা শুরু করেন ড. সা’দত। পিএসসিতে নিয়োগ পেয়েই তিনি চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকের নিয়োগ ও পরীক্ষার পর প্রক্রিয়াধীন নিয়োগগুলো বাতিল করে দেন। ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় চুড়ান্ত হওয়া ফলাফল বাতিল করেন। এই ফলাফল বাতিলের মাধ্যমে তাঁর কাজের সূচনা করেন সেখানে। তিনি তার রাজনৈতিক চেতনা থেকেই পেটে লাথি দিয়েছেন, বঞ্চিত করেছেন বহু যোগ্য চাকরি প্রার্থীকে। কারন কি! কারনট হচ্ছে, ২৭তম বিসিএস পরীক্ষাটি চুড়ান্ত করেছিল ৪ দলীয় জোট সরকারের গঠিত পাবলিক সার্ভিস কমিশন। যেহেতু ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার আতাত ছিল, তাই শেখ হাসিনার পরামর্শেই ড. সাদত ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করেন। যাতে প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতের কোনো লোক ঢুকতে না পারে।
তারপর, ড. সা’দত চরম আত্মঘাতী কাজটি করেছিলেন গ্যাটকো মামলা নিয়ে। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের আমলেই এই মামলাটি হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ক্রয় কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান, জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই মামলায় তাদেরকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্বে থাকা ড. সা’দত হোসেনই ছিলেন সরকারি ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব। সরকারি ক্রয় কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ বরাদ্দ হয়। আর সে কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে ফাইল তৈরি ও প্রস্তাবের নোট লিখে কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন সাদত হোসেন। মামলায় ক্রয় কমিটির সব মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সচিবদের আসামি করা হলেও বাদ দেয়া হয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সদস্য সচিব সাদত হোসেনের নাম। এই মামলায় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আসামির তালিকায় তার নাম যুক্ত করার প্রস্তাব দিলেও উহ্য থেকে যায় এই আমলার নাম।
ওই সময় তার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল, গ্যাটকো মামলার তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে তিনিই পালন করেছিলেন অঘোষিত প্রধান রাজস্বাক্ষীর ভূমিকা। সোজা কথা-ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের আমলে বিএনপি-জামায়াতকে ধ্বংস করতে ড. সা’দত নব্য মির্জাফর হয়ে উঠেছিলেন।