রোহিঙ্গা ক্যাম্প, তাতে কর্মরত ইসলামিক এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে যখন ক্রমাগত অপপ্রচার চলছে ঠিক সেই মুহুর্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা বিদ্যমান মাদ্রাসাগুলোর প্রশংসা করে রিপোর্ট করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
Madrasa a place of prayer and peace for Rohingya kids শিরোনামের এই প্রতিবেদনে রিপোর্টার জানান, তিনি যখন বাঁশে বাধানো মাদ্রাসার ভেতরে তাকান, তিনি দেখেন যে সালিমা খাতুন নামের ৮ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে কুরআন পড়ছে। কিছুটা সময় কুরআন পড়ার পর অনেকটা যক্ষের ধনের মতই সেই কুরআনকে বুকে আকড়ে ধরে সালিমা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে আসে এবং তার ঘরের দিকে চলে যায়।
এই মাদ্রাসাটায় অবশ্য সালিমাই একমাত্র মেয়ে শিশু। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের জুলাই থেকে মায়ানমারের সেনা বাহিনী ও স্থানীয় কিছু উগ্রবাদী বৌদ্ধ নেতারা রোহিঙ্গাদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করলে তারই প্রেক্ষিতে প্রায় ১০ লাখের বেশী রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হিসেবে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আশ্রয় গ্রহন করে।
ক্যাম্পগুলোতে স্থায়ী কোন স্কুলের অনুমোদন না থাকায় সেখানে অস্থায়ী কিছু স্কুল ও মাদ্রাসা চালু হয়েছে। তবে সাধারনভাবে বাচ্চারা মাদ্রাসার দিকেই বেশী ঝুকছে বলে এএফপির প্রতিবেদনে জানা যায়। কুতুপালং নামক এই ক্যাম্পটিতে মাদ্রাসাটিতে সালিমা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন ছেলেও ভর্তি আছে। প্রতিদিন তারা টুপি পড়ে ক্লাসে আসে এবং খুবই আগ্রহের সাথে নিয়মিত কুরআন অধ্যায়ন করে।
সাংবাদিককে সালিমা জানায়, “আমি এখানে কুরআন পড়তে আসি। আমার কুরআন পড়তে অনেক ভাল লাগে। তাছাড়া আমার মা চায় যে আমি ও আমার ভাইয়েরা সবাই কুরআন পড়া শিখি। কারন তাহলেই আমরা ভাল মানুষ হতে পারবো।
যদিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অনেকগুলো খৃষ্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠানও আছে যারা জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় নিয়মিত কাজ করছে এবং গোপনে খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তকরনের কাজ করছে বলেও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তথাপি স্থানীয় প্রশাসন তাদেরকে কিছু না বলে বরং বার বার নানা অযুহাতে মাদ্রাসাগুলোর কাজেই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। এমনকি অনেক সময় নানা এনজিওকে মাদ্রাসা চালু করার অনুমতি দিতেও প্রশাসন কার্পন্য করে। কিন্তু এখনো রোহিঙ্গাদের পরিবারগুলোর বড় একটি অংশ তাদের সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় পড়াতে চায়।
এ প্রসংগে রোহিঙ্গা কর্মী রাফিক বিন হাবীব সাংবাদিকদেরকে জানান, মায়ানমার সেনারা তাদের নারকীয় অভিযানের সময় সবার আগে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আমাদের মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোকে ধ্বংস করে। তারা রাখাইন থেকে ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির সব চিহ্নকে মুছে দিতে চেয়েছিল। মাদ্রাসাগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি তবে সেখানকার বেশ কিছু ধর্মশিক্ষক কোনভাবে জীবন বাঁচিয়ে বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হয়। ঐ শিক্ষকেরাই কিছু এনজিও’র সহযোগিতায় এখানে মাদ্রাসা চালু করেছে। আমরা চাই আমাদের বাচ্চারা এই সব মাদ্রাসায় পড়–ক কেননা তাহলেই তারা নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে একাত্ম থাকতে পারবে।
প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় গোটা ক্যাম্পে বড় মাদ্রাসার সংখ্যা খুবই কম। যেই দুই একটা আছে তাতে ৪০০ জন ছাত্র ছাত্রী পড়তে পারে। আর সালিমা যে ধরনের ছোট মাদ্রাসায় পড়ে, এরকম আরো কিছু মাদ্রাসাও আছে তবে এগুলোতে সর্বোচ্চ ২০-৩০ জন বাচ্চা একসাথে পড়াশুনা করতে পারে। এই মাদ্রাসাগুলোতে রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভাষা ছাড়াও বাংলা, আরবী, উর্দু এবং ইংরেজী ভাষাও শেখানো হয়। তাছাড়া মাদ্রাসাগুলোতে নামাজও শেখানো হয় এবং প্রতি শুক্রবার এখান থেকে লাইন ধরে ছাত্রছাত্রীদেরকে নিকটস্থ অস্থায়ী মসজিদগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাফিক বিন হাবীব এ প্রসংগে বলেন, এই মাদ্রাসাগুলো না থাকলে একটা সময় রোহিঙ্গা ভাষাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারন বাচ্চারা শুধুমাত্র এই মাদ্রাসাগুলোতেই রোহিঙ্গা ভাষা শেখার সুযোগ পায়।