অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ড. কামালের নেতৃত্বধাীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বহুল প্রত্যাশিত সংলাপ। দেশবাসীর নজরও এখন সংলাপের দিকে। অবশেষে সংলাপের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আসুন আমরা জেনে নেই আলোচিত এই সংলাপের খসড়া ফলাফল কী হতে পারে।
ডা. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্য গণভবনে পৌঁছেছেন। ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে নির্ধারিত কক্ষে বসিয়েছেন। সংলাপ কক্ষে চলে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও। সংলাপের শুরুতেই একটু হালকা কুশল বিনিময় করে নিয়েছেন। এবার ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা নিয়ে মূল সংলাপ শুরু।
প্রধানমন্ত্রী: কামাল সাহেব, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আপনাদের কি কি পরামর্শ আছে?
ড. কামাল: আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণ্যযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা ৭ দফা দিয়েছি। এই ৭ দফার ভিত্তিতেই আলোচনা হবে। আমাদের প্রথম দফায় আছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদাসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: কামাল সাহেব, আমি চিঠিতে লিখেছি যে সংবিধান সম্মত সব আলোচনা হবে। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠন করা সংবিধানে নেই। অতএব, এটা মানা সম্ভব হবে না। এই মুহূর্তে সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত: খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আমার হাতে নেই। এটা আদালতের বিষয়। আদালতের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আদালত তাকে মুক্তি দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা নিয়েও আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। এরপর আর কী আছে?
ড. কামাল: আমাদের দ্বিতীয় দফায় আছে- গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চকমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছেন। এখানে বিএনপির দেয়া তালিকা থেকে একজন আছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিবাদও করছেন। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা দরকার নির্বাচন কমিশনকে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমাদের সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনে অনিয়ম হয়নি। সব নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। বিএনপির মতো আমরা মাগুরা স্টাইলে নির্বাচন করিনি। আর ইভিএম নিয়ে যে কথা বলেছেন সেটার সঙ্গে আমিও একমত। কারণ, মানুষকে আগে এটা বুঝাতে হবে। আপনাদের এই দাবিটা আমরা মেনে নিলাম। ইভিএম ব্যবহার হবে না। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দরকার নেই। কমিশন স্বাধীন আছে। তারা স্বাধীনভাবেই কাজ করছে। এরপর আর কী আছে?
ড. কামাল: আমাদের তৃতীয় দফায় আছে- বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: সভা-সমাবেশের অনুমতিতো দিচ্ছি। ইতিমধ্যে আপনারা সিলেট ও চট্টগ্রামে দুইটি সমাবেশ করেছেন। আমরা কোনো বাধা দেইনি। আর সংবাদপত্র বর্তমানে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। যারা মিথ্যা ও অপপ্রচার চালায় আইন শুধু তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে। ৪৪ টি টিভি চ্যানেলের অনুমতিতো আমরাই দিয়েছি। কিন্তু তারা উন্নয়নের প্রচার করে না। তারাতো আপনাদের সমাবেশের প্রচারই বেশি করে। আর নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। সবাই সমানভাবে প্রচার করতে পারবে। সরকার কাউকে বাধা দিবে না। এরপর আর কী আছে?
ড. কামাল: আমাদের চতুর্থ দফায় আছে-কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে আমরা তাদেরকেই গ্রেফতার করেছি। তারা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারের পতন ঘটনাতে চেয়েছিল। এরপরও গ্রেফতারকৃত অধিকাংশই মুক্তি পেয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় সবাই মুক্তি পাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে মানুষের নিরাপত্তার জন্য। গুজব ও অপপ্রচার থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই এই আইন করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য কিংবা সাংবাদিকদেরকে হয়রানি করার জন্য এই আইন করা হয়নি। যারা মিথ্যা অপপ্রচার করবে না ও গুজব ছড়াবে না তাদের কোনো অসুবিধা হবে না। এই আইন করার গুজব অনেক কমেছে। এটা সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন করে এটা বাতিল করা সম্ভব না। এরপর কী আছে?
ড. কামাল: আমাদের ৫ম দফায় আছে-নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: নির্বাচন কমিশন যদি চায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে তাহলে সরকার সহযোগিতা করবে। নিরাপত্তার জন্য আমাদের র্যাব-পুলিশ ও বিজিবিই যথেষ্ট। আর নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা যেসব সহযোগিতা চাইবে সরকার সব করবে। এরপর কী আছে?
ড. কামাল: আমাদের ৬ষ্ট দফায় আছে- নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোটকেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনা স্থল ও কন্ট্রোলরুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: আমরা ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগে কখনো বাধা দেইনি। যারা আসতে চাচ্ছে তাদেরকেই আমরা সুযোগ দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে। আমরা একমাত্র স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি। আগামী নির্বাচনও স্বচ্ছ হবে। চাইলে যেকোনো দেশের পর্যবেক্ষকরা আসতে পারে। এরপর আর কী আছে?
ড. কামাল: আমাদের ৭ম দফায় আছে- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী: যারা জ্বালাও পোড়াও ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবে না তাদেরকেতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বতো সরকারের। সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেনি। যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত, জ্বালাও পোড়াও করে মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে শুধু তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপে এসে পরামর্শ দেয়ার জন্য আপনাদেরকে আওয়ামী লীগ ও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
ড. কামাল: আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আপনাকেও ধন্যবাদ।
গণভবন থেকে বেরিয়ে কথা বলছেন না কেউই। সবার চেহারায় মলিন ছাপ। মুখ খুললেন মির্জা ফখরুল। বললেন- কামাল সাহেব, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে আমরা যাবো না। সবকিছু তার অধীনে থাকলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। ড. কামাল আস্তে করে বললেন- এনিয়ে আমরা আগামীকাল বসবো। বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেব।