অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
১০ অক্টোবর বুধবার বহুল আলোচিত ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। মামলাটি রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এই মামলার ভিকটিম। সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রীসহ ২২ জন এই হামলায় মারা যান। আহত হন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ কয়েকশ নেতাকর্মী।
এই মামলায় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ আরো ১৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
নিজে থেকে কোন গল্প বা অভিযোগ না সাজিয়ে যদি প্রসিকিউশন বা রাষ্ট্রপক্ষের দাবীকৃত গল্পেও যাই, তাহলে বলতে হবে ২১ আগষ্টের হামলাটি তৎকালীন বিএনপি সরকারের একেবারে কেন্দ্র থেকে পরিকলল্পনা করে করা হয়। তারেক রহমান নিজেই এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। তিনি তার তৎকালীন অফিস হাওয়া ভবনে বসে হামলার পরিকল্পনা করেছেন, হামলাকারীদের সাথে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে বাবর সাহেব বা গোয়েন্দা সংস্থার অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, বাবর সাহেবকে কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার সেই কর্মকর্তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো অথচ বৈঠকের মুল আয়োজক, মুল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমানকে কেন সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হলোনা?
কোন রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খোলা রাখার জন্যই কি তারেককে অন্যদের তুলনায় লঘুদন্ড দেয়া হলো?
ঘটনাটি ঘটেছে ২০০৪ সালে। অর্থাৎ প্রায় ১৪ বছর লাগলো মামলার রায় দিতে? বিগত ৩-৪ বছর যারা নিয়মিত মামলাটিকে পর্যবেক্ষন করেছেন তারা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, প্রতিবছর ২১ আগষ্ট আসলেই মামলার রায় কেন হচ্ছেনা, সেই নিয়ে অনেক মাতামাতি হতো। সাংবাদিকরা নানা রিপোর্ট করতেন। মন্ত্রীরাও ২১ আগষ্টের আলোচনায় সেই বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এত বছর পার করে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ দিকে তাও সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে কেন এই রায় দেয়া হলো? বিষয়টা কি তাহলে আর আইনগতভাবে দেখার বিষয় থাকলো, নাকি পুরোপুরি রাজনৈতিক হয়ে গেলো?
এবার আসা যাক অন্য প্রসংগে। গত কয়েক বছর মিডিয়া এই মামলার বিষয়ে বায়াসড রোল পালন করেছে। তারা দেখাতে চেয়েছে, তৎকালীন বিএনপি সরকার এই হত্যার বিচারের ব্যপারে আন্তরিক ছিলনা। বিএনপি জজ মিয়া নাটকও সাজিয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। জজ মিয়া নাকি নিরিহ একজন মানুষ। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে যারা এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তারাই জজ মিয়াকে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক জবানবন্দি নিয়ে এই মামলা সাজিয়েছে।
যদি তাই হয় তাহলে প্রশ্ন জাগে, এই মিথ্যা নাটক যারা সাজালেন, সেই পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে এমনকি সংশ্লিষ্ট সেই তদন্ত কর্মকর্তাদেরকে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন না দিয়ে মাত্র ৪-৫ বছরের কারাদন্ড কেন দেয়া হলো? তাহলে কি নিরিহ মানুষকে ফাঁসানোর অপরাধকে আদালত বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেননি? নাকি মিডিয়া যেভাবে ঘটনাটিকে মিথ্যা বলে দাবী করেছে ঘটনাটি ততটা মিথ্যা নয়?
এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা যে তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজানোর একই অভিযোগ গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দকে এই মামলার তদন্তভার দেয়। আকন্দ সাহেব বিএনপির ঐ তদন্ত কর্মকর্তাদের মতই মুফতি হান্নানকে রিমান্ডে নিয়ে ৩০০ দিনেরও বেশী দিন ধরে নির্যাতন চালায় এবং তার মাধ্যমেই জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি নিয়ে তারেক রহমানসহ অন্যন্য অভিযুক্তদেরকে এই মামলার সাথে সম্পৃক্ত করে।
প্রশ্ন জাগে, বুধবার যদিও সাবেক সেই তদন্ত কর্মকর্তারা লঘু শাস্তি পেলেন, সময়ের চাকা ঘুরলে আব্দুল কাহহার আকন্দও একইভাবে শাস্তি পাবেন কি?
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে লঘু শাস্তি, কাউকে সর্বোচ্চ শাস্তি আবার রাজনৈতিক নেতাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি আবার বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়ায় মামলার রায় যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত নয় তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তাই অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে দেয়া এই রায়ে আসলে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে গেছে।
সময়ই বলে দিবে কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়।