অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে নিয়ে একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। সাধারণ ছাত্রীদের দেয়া জুতার মালার ওপর ছাত্রলীগের ফুলের মালা! এশাই এখন রাজনীতিতে মূল আলোচনার বিষয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের ওপর প্রায় সময়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ছাত্রলীগের এই নেত্রী এশা। গত রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে কবি সুফিয়া কামাল হলের মুরশেদা নামের এক ছাত্রীকে মারাত্মকভাবে নির্যাতন করে এশা। এক পর্যায়ে তার ডান পায়ের রগ কেটে দেয় ওই ছাত্রলীগ নেত্রী।
এই রগ কাটার খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ছাত্রীরা এসে এশাকে ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে এশাকে গণধোলাই দিয়ে ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
এরপর ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।
কিন্তু, আশ্চর্য্যের বিষয় হলো, ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন ও একজন ছাত্রীর পায়ের রগ কাটার জন্য যাকে গণধোলাই ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হলো। দল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাকে বহিষ্কার করলো। সেই এশাকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ তার গলায় ফুলের মালা দিয়ে তাকে শান্তনা দিয়েছেন।
এদিকে বিতর্কিত এক দলীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ছাত্রলীগ এশাকে নির্দোষ দাবি করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহাল করে। তার নির্যাতনের সুস্পষ্ট প্রমাণ যেমন প্রত্যক্ষদর্শী, অডিও ও ভিডিও থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগ কি করে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করলো এটাই এখন প্রশ্নের বিষয়। যদিও বিতর্কিত তদন্ত কমিটি গঠনের সময়ই শিক্ষার্থীরা ভেবে নিয়েছে যে এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্যই এমনটা করা হয়েছে।
সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীদের কাছে নির্যাতনের এক মূর্ত আতঙ্ক ছিলেন ইফফাত জাহান এশা। শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক সভা সমাবেশে নিয়ে যাওয়া, না গেলে নির্যাতন করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়াদের নির্যাতনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হলের সিট হারানোর ভয়ে তার নির্যাতানের শিকার শিক্ষার্থীরা কেউই এতদিন মুখ খোলেনি। রগ কাটার ঘটনাটি প্রকাশের পরই সাহস করে সবাই একে একে প্রকাশ করা শুরু করে।
এদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী এই নেত্রীর শাস্তিতে সবাই খুশি হলেও তাকে স্বপদে বহাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহারের খবরে নতুন করে আবার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সুফিয়া কামাল হলে। এশা ফিরে এসে প্রতিশোধ নিতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রগ কাটা নেত্রীর গলায় দেয়া ফুলের মালার ছবি প্রকাশের পর এনিয়ে সর্বত্র বইছে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই বলছেন, ছাত্রলীগ যত কিছুই করুক না কেন ফুল দিয়ে জুতার মালা ঢাকা যাবে না। তারা এশার গলায় ফুলের মালা দেয়নি, দিয়েছে জুতার ওপর। সন্ত্রাসী আর নির্যাতনকারীদের প্রত্যেকেরই এমন শাস্তি হওয়া জরুরি। সন্ত্রাসীদেরকে ফুলের মালা দিলে তাদের কলঙ্ক লেপন হয় না।