অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে আবারো নানা ধরণের গুঞ্জন ও কানাঘুষা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক কয়েকটি বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
ওবায়দুল কাদের সব সময়ই আলোচনায় থাকতে চান। কখনো নিজ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে। আবার কখনো বিরোধী দলকে নিয়ে মন্তব্য করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আলোচনার চেয়ে তাকে নিয়ে সমালোচনায়ই বেশি হয়ে থাকে।
এবারও গত এক সপ্তাহে ওবায়দুল কাদেরের দেয়া তিনটি বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এনিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও অস্বস্তিতে আছেন বলে জানা গেছে।
প্রথমত, গত ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে ফয়জুর রহমান ফয়জুল নামে এক যুবক অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করেছে। ফয়জুলদের তালাবদ্ধ ঘর থেকে রাতে তল্লাশি চালিয়ে র্যাব সদস্যরা জয়জুলের মামা ও সুনামগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমানকে আটক করেছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ফজলুর রহমানের সুসম্পর্ক রয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজিদ জয়ের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
কিন্তু, ঘটনার তদন্তের আগেই ওবায়দুল কাদের বললেন, বিএনপির পৃষ্টপোশকতায় জাফর ইকবালের ওপর এ হামলা হয়েছে। আর র্যাব-পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল জানিয়েছে, জাফর ইকবাল ইসলাম বিরোধী। সেজন্য তার ওপর সে হামলা করেছে।
তদন্তের আগেই বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া কাদেরের বক্তব্য নিয়ে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সমালোচনা হচ্ছে না, আওয়ামী লীগের ভেতরেও এনিয়ে সমালোচনা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা কাদেরের এ বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সব কিছুতেই বিএনপির ওপর দোষ চাপানো ঠিক নয়। আগে তদন্ত করে দেখতে হবে ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত।
দ্বিতীয়ত, ৭ মার্চের সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় মিছিল নিয়ে আসার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা শাহবাগ ও বাংলামোটরসহ কয়েকটি স্থানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি করেছে। বিশেষ করে বাংলামোটর ও শাহবাগের ২টি ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ওই দিন রাতে একাত্তর টিভির টকশোতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারপর পরের দিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে এসেছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে ধরার জন্য তল্লাশি চালানো হয়েছে। ফুটেজ দেখে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু, শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমাবেশের বাইরে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে এর দায় দল নেবে না।
জানা গেছে, কাদেরের এ বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ দলটির সিনিয়র নেতারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কাদেরের প্রশ্রয়েই ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা খুন-হত্যা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলের একজন সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন যে, সাধারণ সম্পাদকের সাম্প্রতিক বক্তব্যে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। উনি কথা কম বললে দলের জন্য বেশি উপকার হবে।
তৃতীয়ত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ছিল বিএনপির। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। পরে পুলিশের অনুরোধে তারা স্থান পরিবর্তন করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য নেতাকর্মীরা জড়ো হন। কিন্তু, হঠাৎ করেই ডিবি ও গোয়েন্দা পুলিশ এসে বেধড়ক লাঠিচার্জ করতে থাকে। পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি। পুলিশের পক্ষ থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে বিএনপিকে বলা হয়েছিল।
অনুমতি দিয়ে আবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে হামলার ঘটনায় রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু, শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, বিএনপি বেআইনি ও অবৈধ সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তাই পুলিশ বাধা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, কাদেরের এসব বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, বিএনপিতো দেশে কোনো নিষিদ্ধ দল নয়। তাদের সভা-সমাবেশ অবৈধ হবে কেন? অনুমতি দেয়ার পর পুলিশ আবার কেন লাঠিপেটা করেছে সেই ব্যাখ্যা পুলিশই দেবে। আমাদের মনে হচ্ছে কাদের সাহেব দলের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্যই সম্প্রতি সময়ে উল্টাপাল্ট বক্তব্য দিচ্ছেন। হয়তো তিনি আবারো ডিজিএফআইয়ের তাবেদারী শুরু করেছেন।