একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মান বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। মন্ত্রিসভা থেকে জাপার সদস্যদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব।
রওশন এরশাদ বলেন, তাঁরা দেশে-বিদেশে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা লাগে। কারণ, সবাই জানতে চায়, জাতীয় পার্টি সরকারি দল না বিরোধী দল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধীদলীয় নেতা প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা সরকারি দল, না বিরোধী দল, কোনটা আমরা?’
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রওশন এ প্রশ্ন রাখেন। দশম জাতীয় সংসদের শেষ বছরে এসে নিজেদের পরিচয় সংকট নিয়ে মুখ খুললেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমাদের মন্ত্রীগুলোকে উইথড্র করে নেন। আমাদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দিন। কিন্তু আমি জানি না, কেন সেটা হয়নি।’
রওশন বলেন, এভাবে টানাটানি করে বিরোধী দল হওয়া যায় না। তারা হয় বিরোধী দল হবেন, নাহলে সরকারে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘নাহয় আমাদের ৪০ জনকে সরকারে নিয়ে নেন। বিরোধী দল দরকার নেই।’ রওশন হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি বলতে পারতেন, ঠিক আছে সব মন্ত্রিত্ব ছাড়। মন্ত্রিত্বে থাকার দরকার নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘এটা যদি আপনি করতেন, জাতীয় পার্টি বেঁচে যেত। জাতীয় পার্টি সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারত। আমরা এখন সম্মানের সঙ্গে নেই। এক বছর আছে আরও, সেটা দেখেন।’
এ সময় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা মাইক চালু না করে কিছু একটা বলেন।
জবাবে রওশন বলেন, ‘আপনি নির্দেশ দিলে মানবে না কে? না, আপনি দিলেন না তো। না, দেন নাই। নইলে সবাইকে নিয়ে নেন। সবাইকে মন্ত্রী বানিয়ে দেন।’
এ সময় কেউ একজন পাশ থেকে বিষয়টি বাদ দেওয়ার কথা বললে রওশন এরশাদ বলেন, এটা তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাদ দেব কেন?
রওশন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা যখন বাইরে যাই, তখন সবাই বলে, তুমি কোথায় আছ, সরকারে না বিরোধী দলে? আমরা তো বলতে পারি না।’
রওশন সরকারি দলের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, আপনার যখন বিদেশে যান, বলতে পারেন বিরোধী দলে কারা আছে? বলতে পারেন না তো। আমরাও বলতে পারি না। সে জন্য আমি কোনোখানে ইন্টারভিউ দিই না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলি না। কথা বললে প্রথমে ধরে এটা। কী করব আমি?’
রওশন যখন এসব বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে থাকা জাপার সদস্য স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমানকে মৃদু হাসতে দেখা যায়। আরেক সদস্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তাকিয়ে ছিলেন রওশনের দিকে। আর সরকারের আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ সরকারি দলের অনেক সদস্যকে হাসতে দেখা যায়।
অবশ্য রওশনের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, বর্তমানে বিরোধী দল রওশন এরশাদের নেতৃত্বে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে, গঠনমূলক আলোচনা করছে। সংশোধনী নিয়ে আসছে। গণতান্ত্রিক চর্চা সুষ্ঠুভাবে কীভাবে করা যেতে পারে, তার নজির সংসদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় সবাই টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করেন।
দশম সংসদের শুরু থেকেই একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে আছে জাপা। বিএনপি জাপাকে গৃহপালিত বিরোধী দল বলে আসছে। জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও বিভিন্ন সময় এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সূত্র: প্রথম আলো