বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, সিরিয়ায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে নিরপরাধ নারী শিশুসহ মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। আর লজ্জাজনকভাবে বিশ্ববাসী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এই অবস্থায় মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকা উচিৎ নয়। অবিলম্বে সিরিয়ায় নারী শিশুসহ গণহত্যা বন্ধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আজ নরসিংদীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির নরসিংদী জেলা ও শহর শাখার সদস্য শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শিবির সভাপতি বলেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। স্বৈরাচার ও সম্রাজ্যবাদী অপশক্তির নারকীয় গণহত্যার শিকার হয়ে চলেছে সিরিয়ার মুসলমানরা। দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী হিসেবে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলেও বর্তমানে তা আরো ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে। গণহত্যার শিকার অধিকাংশই নারী ও শিশু।
তিনি বলেন- রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী জেলা শহর পূর্ব ঘৌটায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বেসামরিক মানুষকে আটকে রেখেছে স্বৈরাচার আসাদ বাহিনী ও তার মিত্ররা। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য ও ওষুধের অভাবে সেখানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং মানুষ তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এরই মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়ার সামরিক বিমানের সাহায্যে ঘৌটায় নির্দয়ভাবে হামলা চালায়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এ হামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে শিশুই রয়েছে দুই শতাধিক। এমনকি বেসামরিক মানুষদের উপর বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে, যার প্রভাবে বহু নারী শিশু মারা যাচ্ছে। অথচ বিশ্ববাসী এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় বর্বর কর্মকান্ড থামাতে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
ইয়াছিন আরাফাত বলেন- গত বছর সেপ্টেম্বরে ভূমধ্যসাগরের তুরস্ক উপকূলে আয়লান কুর্দি নামের এক তিন বছরের সিরীয় শিশুর লাশ সমগ্র বিশ্বের মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের মধ্যে আবেগ ও সহানুভূতির সঞ্চার করলেও যুদ্ধের নেপথ্য পরিচালকদের মনে এতটুকু রেখাপাত ঘটায়নি। যা মানবতার জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয়। আমরা এ গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সিরিয়ায় বর্বর আগ্রাসন বিশ্ব সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। সিরিয়ায় স্বৈরশাসক ও তার মিত্রদের ধারাবাহিক নৃসংশতায় নিরব থাকা তাদের বর্বরতার প্রতি সরাসরি সমর্থন দেয়ার শামিল। বিশ্বের শান্তি প্রিয় মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ সিরিয়ার শিশুদের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহগুলো আর দেখতে পারছে না। অবিলম্বে এ বর্বরতা বন্ধে বিশ্ববাসীকে বিশেষ করে মুসলিম নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। সিরিয়ায় স্থায়ী শান্তি স্থাপনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের সকল প্রান্তে নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানদের রক্ষায় কার্যকর সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।
অবিলম্বে সৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদীদের বর্বরতা থেকে সিরিয়ার জনগণকে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতিসংঘ, ওআইসি, আরবলীগ, মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান শিবির সভাপতি। একই সাথে বাংলাদেশের আপামর ছাত্রজনতা সহ সরকারের পক্ষ থেকে সিরিয়ায় গণহত্যা বন্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার আহবান জানান। তিনি সিরিয়াসহ নির্যাতিত সকল মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনায় দোয়া করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান।
শহর সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও জেলা সভাপতি হাফেজ মুনির হোসেনের পরিচালনায় শিক্ষা শিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যান সম্পাদক মনিরুজ্জমান শামীম, সাবেক কলেজ সম্পাদক মারুফুল ইসলাম। এসময় শহর সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন জেলা সেক্রেটারি মনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তি