বিএনপিকে ব্যস্ত রেখেই আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা সেভাবেই কাজ শুরু করেছেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন দল গোছানোয় মনোযোগী হয়েছেন। জেলায় জেলায় চলছে সাংগঠনিক সফর। একই সঙ্গে বিরোধ কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায়ও কাজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে ভোট থেকে। প্রাধান্য দেওয়া হবে নবীনদের।
জানা গেছে, বিএনপিকে মামলায় ব্যস্ত রাখতে চায় সরকারি দল। সিনিয়র নেতাদের অনেকেই মনে করেন, মামলায় ব্যস্ত থাকলে তারা আর ভোটে না-ও আসতে পারেন। এলেও সুবিধা করতে পারবেন না। এ সুযোগই কাজে লাগাতে চায় সরকার। এর মধ্যে ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেলগুলো। চলছে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও। আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোট শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। সেভাবেই এগিয়ে চলছে সব প্রস্তুতি। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মামলা মোকাবিলায় ব্যস্ত রয়েছেন। এতে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে জাতীয় সংসদের সাবেক এই বিরোধী দল। আর একেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা হওয়ার পর দলটির ভিত্তি নড়ে গেছে। খালেদা জিয়ার মাথার ওপর ঝুলছে জিয়া চ্যারিটেবলসহ ৩৫ মামলা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ও শিগগিরই হবে বলে মনে করছেন তারা। ফলে মামলা নিয়ে এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছে বিএনপি। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যস্ত সময় পার করতে হবে দলটিকে। কিন্তু বিএনপির জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে দলীয় নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও মাঠ গোছানোর মতো সময় তাদের হাতে থাকবে না।
অবশ্য দলগতভাবে আওয়ামী লীগ বা সরকার নয়, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য সেই দলটিই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ। বিএনপির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নেয়নি। বিএনপি নেত্রীকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাও অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি আসেননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করে সরকার গঠন করেছি। এ নিয়ে অনেক কথাও হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও সংবিধান মেনে নির্বাচন করেছে। এখন আবার সামনে নির্বাচন। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি আসবে এটা আমাদের বিশ্বাস।’ তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী জেলে। এখানে আওয়ামী লীগ বা সরকার দায়ী নয়। এ ছাড়া আইনের অনেক ধাপ এখনো সামনে রয়েছে। তারা আইনি পথেই এগোবেন। এখনো নির্বাচনের প্রচুর সময় বাকি। তাই কে নির্বাচনে আসবে কে আসবে না, এ ব্যাপারে আগাম মন্তব্য করা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন হবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। আর আওয়ামী লীগ বা সরকার কোনো রাজনৈতিক কৌশলে বিএনপিকে ব্যস্ত রাখেনি। বিএনপি তাদের অপকর্মের ফল ভোগ করছে।’
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন