সরকার সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে মকবুল আহমাদ বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ এক মহাসংকটে নিপতিত। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান, বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চরম হুমকির সম্মুখীন। ক্ষমতায় টিকে থাকার নেশায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিচার বিভাগকে ধ্বংসের গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা। এ উদ্দেশে তারা আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। অথচ দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। উপজেলা নির্বাচন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, পৌরসভার নির্বাচনসহ দেশে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে নির্বাচনের নামে মূলত: আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরকে ক্ষমতায় বসানোর ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আজ দেশে কোন নির্বাচনী পদ্ধতি নেই। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত সর্বসম্মত রায়ের ভিত্তিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে সংবিধান, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক বিষয়ে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। আদালত আমিত্ব ও দলগত প্রাধান্য অর্জনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কড়া সমালোচনা করে তা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে মত দেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন। আদালত জাতীয় সংসদের শতকরা ৭০ ভাগ সদস্য ব্যবসায়ী ও সংসদ অপরিপক্ক বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন। আদালত সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য নিরপেক্ষ ও গ্রহযোগ্য নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ করে কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরেন। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায় ও পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ দেশে এক ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি ও মন্ত্রীগণ প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ বিচারকদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট তার প্রদত্ত বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে যে কুরুচিপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রেখেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বলেন। সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেন। প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতিকে ডেকে নিয়ে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার উপর চাপ সৃষ্টি করেন। আওয়ামী আইনজীবীগণ সমাবেশ ডেকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আলটিমেটাম দেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের আদালত ইতোপূর্বে বহু মামলার রায় দিয়েছেন। আওয়ামী সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় আদালতের রায়ের ভিত্তিতে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ ৫ জন শীর্ষ নেতার ও দেশের প্রধান বিরোধী দলের একজন নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ বিতর্কিত বিচার ও রায়ে অনেক অসঙ্গতি থাকার পরও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করেনি। অন্যায়ভাবে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেওয়ার নেপথ্যের ইতিহাস একদিন জাতির সামনে উন্মেচিত হবেই। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ তাদের আজ্ঞাবহ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যার জন্য তারা প্রকাশ্যে আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে য্দ্ধু ঘোষণা করেছে। দেশবাসীর কাছে এটা স্পষ্ট যে, এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। এ সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ নয়। সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগকে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বিজ্ঞপ্তি
Discussion about this post