বাড়ি থেকে ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার শ্রমিকলীগ নেতা তুফানসহ ৩ জনকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এর আগে তিনজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তবে এখনো ধরা পড়েননি নির্যাতনকারী নারী কাউন্সিলর ও অন্যরা।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটি এখনো অসুস্থ। চিকিৎসক জানিয়েছেন, সে শঙ্কামুক্ত।
আজ রোববার বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শ্যামসুন্দর রায়ের আদালতে আসামি বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার, তাঁর সহযোগী শহরের চকসূত্রাপুর কসাইপট্টির আলী আজম ওরফে ডিপু এবং কালীতলা এলাকার রূপমকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় আতিকুর রহমানকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়নি।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, নতুন কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। নির্যাতনকারী নারী কাউন্সিলর ও অন্যদের ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে মাদকের দুটি মামলা রয়েছে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে যুবদল নেতা ইমরান হত্যা মামলা ছিল। মেয়েটির ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য আজ আবেদন করা হবে।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবদুল মোত্তালেব হোসেন বলেন, মেয়েটির শরীরে লোহা বা রড–জাতীয় বস্তু দিয়ে সাত থেকে আট জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। ফোলা ও জখম আছে। তবে সে শঙ্কামুক্ত।
জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা-মেয়েকে দেখতে যান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি মেয়েটিকে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। মেয়েটির ফলাফলের ভিত্তিতে তার কলেজে ভর্তির ব্যবস্থাও করবেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ প্রধানের নেতৃত্বে কমিটিতে আছেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম খান ও জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, এই ঘটনা খুবই জঘন্যতম। কাউকে মুখ দেখানো যাচ্ছে না। দলীয়ভাবে তিনি লজ্জিত বলে জানান। বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, এমন কোনো অপকর্ম নেই যে এই নেতা করেন না। তাঁর অভিযোগ, শ্রমিক লীগের এক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় আছেন তুফান। হাইকমান্ড তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে পালন করা হবে।
গত শুক্রবার বিকেলে কলেজে ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা দলীয় ক্যাডার ও এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন। চার ঘণ্টা ধরে তাঁরা ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তাঁর স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছেন।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post