দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে বিএনপি আয়োজিত সদস্য সংগ্রহ অভিযানের আলোচনা সভা ছিল। এ সময় বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন বর্ণনা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আমি আপনাদের কাছে এসেছিলাম। আমি জেনেছিলাম কী নিদারুণ কষ্টের মধ্যে আপনারা দিন যাপন করেছিলেন। আপনারা কেউ ঘরে থাকতে পারেননি। তখন প্রচণ্ড শীত ছিল। সেই শীতের মধ্যে আপনারা ধানখেতে, অথবা গাছের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন।’ এসব কথা বলেই আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
এর আগে গত বছরের ২৩ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘৩০টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল’ বন্ধের প্রতিবাদ জানাতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) আলোচনা সভায় দলের নেতা-কর্মীদের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করার সময় কেঁদেছিলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আজ বলেন, ‘আপনাদের অনেক কষ্ট, যন্ত্রণা, ব্যথা ও বেদনা। এখনো ওই কষ্টের শেষ হয়নি। এখনো এই দখলদারি সরকারের, যাদের কোনো বৈধতা নেই, সরকারে থাকার, যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি, তাদের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ যখন-তখন এসে আপনাদের বাড়িঘরে হামলা করে, গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। কখনো কখনো টাকাপয়সা নেয়।’
সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। যারা দুর্বল, তারাই বিরোধীদের ওপর অত্যাচার করে। যাদের মনের দিক থেকে সাহস নেই, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই, তারাই অত্যাচার করে; তারাই নির্যাতন করে। আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে গোটা পরিবার, গোটা পাড়া, গোটা এলাকা ওদের বিরুদ্ধে চলে গেছে।
ফরহাদ মজহারের অপহরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফরহাদ মজহারের মতো একজন মানুষ, যিনি কোনো দল করেন না। লেখালেখি করেন। লেখায় তাঁর চিন্তাভাবনাগুলোকে নিয়ে আসেন। তিনি বিএনপির কেউ নন। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের কোনো মিল নেই। তাঁকে আপনারা তুলে নিয়ে যান। গুম করার চেষ্টা করেন। তখন কী ভাববে লোকজন, আপনারা কতটা দুর্বল হয়ে গেছেন। একটি-দুটি নয় তো, অসংখ্য গুম করে দিয়েছেন। আমাদের হিসাব অনুযায়ী আমাদের ৫০০ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করে দিয়েছেন।’
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১৭’ প্রকাশ করা প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন, গুম করে ফেলা, হত্যা করা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
নেতা-কর্মীদের সাহস দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কখনো মনোবল হারাবেন না। মনের জোর শক্ত করে ধরে রাখবেন। আমাদের যদি বিশ্বাস সত্যি হয়, তবে এরা পরাজিত হবে, সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।’
আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যখন সময় আসবে, প্রয়োজন আসবে, তখন যে ধরনের আন্দোলনের প্রয়োজন হয়, সে ধরনের আন্দোলনের ক্ষমতা বিএনপির আছে। আগেও আমরা সেই আন্দোলন করেছি। তবে আমরা আশা করব, সেই আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলবে, আলোচনা করবে। সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post