‘আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “হাসিনার আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন। আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে সে এরমধ্যে অনেক কাজ করেছে। এখন এদেশের সে কিছুই রাখেননি, সবই বিক্রি করেছে।
“আরো বোধহয় বাকি যেটা আছে, সেটাও বিক্রি করে আসবে।”
প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা বলেন, “কিন্তু দেশ বিক্রি করে পৃথিবীর ইতিহাসে ধারণা আছে, কেউ রক্ষা পায় নাই। হাসিনা মনে করে না, যাদের কাছে দেশ বিক্রি করলাম, তিনারা তাকে বাঁচাতে আসবে না। তারা বাঁচাতে আসবে না, যখন মানুষ জেগে উঠবে।”
“দেশের মানুষ অলরেডি ফুলে উঠেছে, ফুঁসে উঠেছে। এখন দেশের মানুষের শুধু সময়ের অপেক্ষা করা যে, কখন তারা রাস্তায় বেরুবে; এই অন্যায়-জুলুম অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াবে- এটা সময়ের ব্যাপার।”
রাত সোয়া ৯টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত নুরুল আলম নুরুর বিধবা স্ত্রী সুমী আখতার, বড় মেয়ে উম্মে হাবিবা মীম, দুই ছেলে নাঈমুল আলম ও নুবায়েত আলম পরিবারের সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন।
এই উপলক্ষে ছাত্রদল আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়াকে দেখে নিহতের স্ত্রীসহ সন্তানেরা ঘুমরে ঘুমরে কাঁদতে থাকে। বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের কাছে টেনে সান্ত্বনা দেন। নুরুর স্ত্রীর হাতে অনুদানের একটি চেকও দেন খালেদা জিয়া।
এ সময় নিহত নুরুর শাশুড়ি জাহানারা বেগম, নুরুর ছোট বোন মনোয়ারার বেগমসহ পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।
গত ৩০ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় নুরুল আলম নুরুকে চট্টগ্রামের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ওইদিন ভোরে তার লাশ রাউজান উপজেলার পাগুয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীরে খেলাঘাট কৈইয়াপাড়া এলাকায় পাওয়া যায়।
নুরুকে হত্যা করা হয়েছে মন্তব্য করে সরকারের সমালোচা করে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।
“আজকে আওয়ামী লীগ এবং হাসিনার হাতে মানুষ রক্তে রঞ্জিত। হাসিনা প্রতিনিয়ত দেশের মানুষকে খুন করছে, হত্যা করছে। সে (হাসিনা) ভাবতে পারে না, জনগণ হয়ত জানতে পারে না, উপরে একজন আছেন যে, তিনি সব দেখছেন, সব জানেন। সময়মতো তিনি ঠিকই বিচার করবেন।”
“শেখ হাসিনার বিচার এদেশের মানুষ এদেশের মাটিতে করবে।”
বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে অনুষ্ঠানে উপস্থিতির উদ্দেশে বিএনপি নেত্রী বলেন, “র্যাবের যে ঘটনা বেরিয়েছে, সেটা যদি দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন কীভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। শুধু র্যাব তো নয়, আরো বহু বাহিনী বানিয়েছে, কী কী সব।
“সমস্ত বাহিনী দেশ গড়ছে এমন যত রাজনৈতিক ভালো ভালো ছেলে-পেলে আছে, যারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে পারবে, দেশের মানুষের সেবা করতে পারবে, কাজ করতে পারবে, সেই সব লোকজনকে বাছাই করে; যাতে দেশটা দুর্বল হয়ে থাকে, পঙ্গু হয়ে থাকে। অন্যায় করলে যাতে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারে, সেই সব ছেলে-পেলেকে বেছে বেছে, মেধাবী শিক্ষিত ছেলে-পেলেদেরকে র্যাব খুন করছে, হত্যা করছে।”
এসবের পেছনে একটা বড় পরিকল্পনা রয়েছে মন্তব্য করে খালেদা বলেন, “কী পরিকল্পনা, হাসিনার আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন।”
সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিএনপি নেত্রী বলেন, “হাসিনা আজকে খুনি, সে প্রধানমন্ত্রী নন। জনগণের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হননি। অবশ্যই একদিন তাকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। রক্ত কখনো বৃথা যায় না।”
নুরুর পরিবারকে দেখাশুনা করার জন্য দলের চট্টগ্রাম নেতাদের অনুরোধ জানান খালেদা জিয়া।
ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সাহাদাত হোসেন, জেলা যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, নিহত নুরুর মেয়ে উম্মে হাবিবা মীম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাসির, রুহুল আলম চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মাহবুবুর রহমান শামীম, আনোয়ারুল আজীম, আজিজুল বারী হেলাল, হারুনুর রশীদ, আবদুল আউয়াল খান, শহীদুল ইসলাম বাবুল, অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ডোনার, ফাওয়াজ হোসেন শুভ, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকর, আবু সুফিয়ান, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, কাদের গনি চৌধুরীসহ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বিডিনিউজ
Discussion about this post