মেহেরপুর -১ আসনের আওয়ামী লীগ নেতা প্রফেসর আব্দুল মান্নান, যিনি ১৯৯১ সালে ও ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের দ্বাদশ ইলেকশনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
তিনি এক সরকারি কর্মকর্তাকে ধমক দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।’ একটি স্বাধীন দেশে কেউ কি অন্য দেশের প্রার্থী হতে পারে! এটা কি সম্ভব?
দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও শ্লোগান বিএনপি’র নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী জোট ২০১০ সালে আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলনে বিরোধী দল সফল হয়। সে ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগ এদেশকে ভারতের ইচ্ছের কাছে তুলে দিয়েছে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। এখানে গুম হওয়া যাওয়া, খুন হয়ে যাওয়া, পুলিশ ও ছাত্রলীগ দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া একেবারেই নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭১ সালে কেন জামায়াত স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতা করেছিল, এই প্রসঙ্গে তৎকালীন জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম বলেছেন, আমরা স্বাধীনতার নামে ভারতের অধীনতা মেনে নিতে পারি না।
আজকে তো অধ্যাপক গোলাম আযমের কথাই ঠিক হলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ভারতের করতলগত রাজ্যে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, ব্যবসা, বর্ডার গার্ড, বাজার, শিল্প কারখানা, বৈদেশিক বাণিজ্য এমনকি এদেশের রাজনীতি ভারত ঠিক করে দেয়। এদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না, ফেয়ার ইলেকশন দেখে নি গত ১৫ বছর। এর কারণও ভারত।
মেহেরপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান জেলার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমার দাসের সঙ্গে ফোনালাপে বলেন তিনি ভারত ও হাসিনার প্রার্থী। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে।
ফোনে ডা. অলোক কুমার দাসকে হুমকি দিয়ে প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তুমি বাইরে থেকে এসে মেহেরপুরে খুব আরামেই আছো। টাকা-পয়সা অনেক কামাই করছো। বাড়ি-ঘর করেছো। আমি যদি আর একটা কথা শুনি মন্ত্রীকে (প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন) ভোট দেওয়ার ব্যাপারে, আমি এমপি হই, আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেব। আর যদি তুমি সাবধান হয়ে যাও তাহলে আমার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকতে পারবে। এটুকু আমি তোমাকে বললাম। পারলে তোমার মন্ত্রীকে বলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী, এটি তোমাকে মনে রাখতে হবে। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি। সাবধান হয়ে যাও তুমি। আমি তোমার কোনো কথা শুনব না। আমি যে রিপোর্ট পেয়েছি, আমি খুব অসন্তুষ্ট তোমার প্রতি, তুমি সাবধান হয়ে যাও।’
এ বিষয়ে ডা. অলোক কুমার দাশ বলেন, গেল ১৭ ডিসেম্বর প্রফেসর আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে আমার ফোনে একটি ফোন আসে। সে ফোনে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। তবে এটি সাধারণ বিষয় মনে করেছি। বিষয়টি আমার ফোনে অটোকল রেকর্ড হয়ে যায়। এর বেশি কিছু বলতে চায় না। আমি শান্তিতে থাকতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এসব নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হাসান অডিওটি মেহেরপুরের দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির এই শাখার সভাপতি মো. কবির হোসেনকে দিয়েছেন।’
এর আগে ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের গবেষক সাংবাদিক জুলকারনাইন সিয়ার দাবী করেছেন ভারতের র’ ৪০ জনের প্রার্থীতা ও জিতে আসার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এর মধ্যে একজন হলেন ফেনী ৩ আসনের জনাব আবুল বাশার।
জুলকারনাইন সিয়ার বলেন, //ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর কর্মকর্তাদের সাথে ১৫ কোটি টাকায় ফেনী ৩ আসনের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন জনাব আবুল বাশার। বিশ্বস্ত সুত্রের বরাতে র’ এর কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো অগ্রীম ১ কোটি টাকা পে-অর্ডারের কপিও সংযুক্ত করা হলো।
গত ২৩ শে নভেম্বর বায়তুল মোকারম মার্কেটের ব্যবসায়ী এ কে এম বরকতউল্লাহ-কে পে অর্ডারের মাধ্যমে ১ কোটি টাকা প্রদান করেন বাশার। বরকতউল্লাহ হুন্ডি চক্রের সাথে জড়িত বলে গোয়েন্দা সুত্র নিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে ওই টাকা পাওয়ার পর ২৫ শে নভেম্বর বাশারকে বশির জি সম্বোধন করে ‘Congratulations’ জানিয়ে মেসেজ পাঠায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জনৈক কর্মকর্তা। যা নিশ্চিত করে আবুল বাশারের মনোনয়ন।//
গতকাল প্রফেসর মান্নান নিজ মুখেই স্বীকার করলেন তিনি ভারতের প্রার্থী। যারা দ্বারা সাংবাদিক জুলকার নাইনের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
অত্যান্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, আব্দুল মান্নান এত বড় স্বাধীনতাবিরোধী কথা বলার পরও মানুষের মধ্যে কোনো বিকার নেই। এদেশের মানুষও যেন ভারতের অধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। এই গোলামী মানসিকতা বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। আত্মমর্যাদাহীন জাতিতে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রকে করেছে তলাবিহিন ঝুড়ি।
Discussion about this post