জাতির ঘারে জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধ শুরু রবিবার থেকে । বলা যায় গত তিন দিনের অবরোধে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার ঘোষণা দিলেও আসলে তারা কোথাও নেই। অবরোধ মোকাবেলায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব বাহিনী বিরোধী দলের কিছু মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পারলেও কোনো পরিবহন রাস্তায় নামাতে পারেনি। পরিবহন মালিকরাও অবরোধ পালন করছে।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল-বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা এবারও সেই পুরনো আগুন খেলায় মেতে উঠেছে। আর এ খেলায় শেখ হাসিনা খুবই পারদর্শী। গত কয়েক বছর ধরে এই আগুন খেলায় শেখ হাসিনাই চ্যাম্পিয়ান হচ্ছেন।
একটু অতীতের দিকে তাকালেই দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সালে ফ্যাসিস্ট হাসিনার একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশে গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের টানা হরতাল অবরোধে পুরো দেশ কার্যকর অচল হয়ে পড়েছিল। সেই আন্দোলন দমন করতে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সেদিন এই আগুন খেলার উদ্বোধন করেছিল। এজেন্সির লোক দিয়ে শেখ হাসিনা বাসে আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যা করেছিল। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের উপর দায় চাপাতো। শেখ হাসিনার এক গডফাদার পঙ্কজ দেবনাথ তো পরবর্তীতে স্বীকারই করেছে যে শেখ হাসিনার নির্দেশেই তারা বাসে আগুন দিয়েছে।
তারপর শেখ হাসিনা একই খেলা খেলেছে ২০১৫ সালেও। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধে শেখ হাসিনার যায় যায় অবস্থা হয়েছিল। খুনি হাসিনা যখন দেখলো যে ক্ষমতায় আর থাকা যাবে না, তখনই গণআন্দোলন দমনে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মিশনে নামে। ওই সময়ও পাষÐ হাসিনা তার গুন্ডা বাহিনী ও এজেন্সি দিয়ে বাসে আগুন দিয়ে অনেক মানুষ হত্যা করেছিল।
মাঝে দীর্ঘদিন কোনো আন্দোলন না থাকায় হাসিনার এই খেলাটা বন্ধ ছিল। কিন্তু গত ২৯ জুলাই থেকে আবার আগুন খেলায় মেতেছে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বিএনপির ডাকা ঢাকার চারপাশে অবরোধের সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। আর এই আগুন দেয়ার কাজটা করেছিল হাসিনার হেলমেট বাহিনী।
যাত্রাবাড়ীতে হেলমেট বাহিনীর লোকেরা বাসে আগুন দেয়ার সময় সাধারণ মানুষ সেই দৃশ্য দেখেছিল। প্রত্যক্ষ দর্শীরা বলেছে, হেলমেট মাথায় কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে বাসে আগুন দিয়ে আবার চলে গেছে। ওই হেলমেট বাহিনী ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। কারণ, পুলিশের ধাওয়ায় অনেক আগেই বিএনপির লোকজন রাস্তা থেকে সরে গিয়েছিল। পুরো এলাকা তখন পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। এমনাবস্থায় বিএনপির লোকজন এসে বাসে আগুন দিয়ে যাবে এটা বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসংগত কোনো কারণ নাই।
এরপর ২৮ অক্টোবর থেকে যখন বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে চুড়ান্ত আন্দোলন শুরু করলো, তখনই আবার সেই আগুন খেলায় মেতেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। প্রতিদিন দিন দলীয় ক্যাডার ও এজেন্সির লোক দ্বারা বাসে আগুন দিয়ে দোষ চাপাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের উপর। হাসিনা এবং দলের লোকজন যতই বিএনপি-জামায়াতের উপর দোষ চাপান না কেন দেশের মানুষ এখন আর এগুলো বিশ্বাস করে না। এদেশের মানুষ এখন এটাই বিশ্বাস করে যে শেখ হাসিনা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারতে খুব পারদর্শী। আর সেদিন এটা প্রমাণও হয়েছে। হাইকোর্টের সামনে ছাত্রলীগ নেতারা বাসে আগুন দিয়ে বাস থেকে নেমে গেছে এটা প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছে। এক ছেলে চিৎকার করে বলছে-স্যার, আমি দেশের জনগণ। আমি দেখেছি বাস থেকে ছাত্রলীগের পাঁচজন লোক নামার পরই বাসে আগুন ধরেছে। কিন্তু তাকে কথা বলতে দিচ্ছে না। এ ঘটনায় প্রমাণ করে বাসে আগুন দেয়ার সাথে কারা জড়িত।
শনিবার ( ৪ নভেম্বর ) সন্ধ্যার পরে মোট চারটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এমনকি গুলিস্তানে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশেও একটি বাসে আগুন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের পালিত বাহিনীরা। যার সম্পূর্ন দায়ভার চাপানো হচ্ছে বিএনপি জামায়াতসহ বিরোদীদলগুলোর উপরে।
যেখানে বিএনপির সকল নেতা প্রায় গ্রেপ্তার কিছু আত্মগোপণে রয়েছেন। সেখানে গুলিস্তানের মত জায়গায় গিয়ে বিএনপি জামায়াতের লোকজন আগুন দিবে এটি অসম্ভব ব্যাপার। অত্যাধুনিক পুলিশ আর প্রযুক্তি সাথে সিসি ক্যামেরা থাকা স্বত্বেও কেন তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আটক করা হচ্ছে না? সময় ক্ষেপন করে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দোষ চাপানোর নাটক সাজায় আওয়ামী প্রশাসন।
Discussion about this post