বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা এতোই খারাপ যে, এখানে কোনো নিয়মকানুন নেই। যে যার ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করছে। সরকার ব্যবসায়ীদের থেকে আগেই অবৈধ সুবিধা নিয়ে বসে আছে। তাই সরকারও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এমন নয় যে, বাংলাদেশে আলু, পিয়াজ ইত্যাদির সংকট। উতপাদনও হয়েছে ভালো। শুধু দামটাই বেশি। এখানে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
ফলে রাজধানীর বাজারে বেড়েই চলছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এ সপ্তাহে যা বেড়ে ১৩০ টাকা ছাড়িয়েছে। আগের চড়া দামে অপরিবর্তিত রয়েছে সবজির বাজারও। অন্যদিকে বাজারে শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে অস্বাভাবিক দামে। আর গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হয়েছে মুরগি-ডিম ও মাছ।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকার ওপর। যা পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১২০ ও ৯০ টাকার ওপর। কোনো কোনো দোকানে আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১শ’ টাকা দরে। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা এবং ২ সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকারও বেশি।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত বাজার চড়াই থাকবে। এ ছাড়া শীতের কিছুটা প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের বাজারে। কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ সহজ, তাই অনেকেই মজুদ করে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি করছে। ফলে বাজারে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ খুচরা বিক্রেতাদের।
প্রায় একই অবস্থা আলুর বাজারে। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে আরও ৫ টাকা বেড়ে ভালো মানের আলু বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকার ওপর। অন্যদিকে মানহীন আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। যদিও আলু ও পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দাম যথাক্রমে প্রতি কেজি ৩৫ ও ৬৫ টাকা। সে হিসেবে বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এ দু’টি পণ্য।
এদিকে অব্যাহত আছে সবজির বাজারের উত্তাপ। এ শুক্রবারও রাজধানীর বাজারে ১শ’ টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে সরু লম্বা বেগুন, কচুরলতি, কচুরমুখী ও বরবটি। ১২০ টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে করলা গোল বেগুন, গাজর ও টমেটো। আর ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ঢেঁড়শ, পটোল, দুনধুল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, শসা ও কাকরোলসহ বেশিরভাগ সবজি; যা বাজারে নিয়মিত ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। অন্যদিকে পেঁপের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬০ টাকা ও লাউয়ের পিস ৮০ টাকা দরে। অপরিবর্তিত ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। এ সপ্তাহে বাজারগুলোতে শীতের আগাম সবজির সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, বিশেষ করে সিম ও ফুলকপির। তবে বিক্রি হচ্ছে আগের চড়া দামেই। এদিন ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, সিম ২৫০ টাকা। যদিও ৩ সপ্তাহ আগে দেড়শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সিম। সে হিসেবে সরবরাহ বৃদ্ধি সত্তে¡ও কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১শ’ টাকা।
অন্যদিকে শুক্রবার বাজারে তুলনামূলক ডিমের দাম কমলেও এখনো নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে দেড়শ’ টাকা দরে। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পরও বাজারে আমদানিকৃত ডিমের সরবরাহ শুরু হয়নি। তবে প্রান্তিক খামারিদের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দু’ সপ্তাহ ধরে নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
যথারীতি এ সপ্তাহেও রাজধানীর বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। এদিন সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা, কিছুটা কমে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২শ’ টাকা দরে এবং লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা দরে। অপরিবর্তিত দামে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ টাকায়।
অন্যদিকে গত সপ্তাহের দাম অব্যাহত আছে মাছের বাজারে। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা, বড় কাতল ৫শ’ টাকা, বড় পাঙ্গাশ আড়াইশ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩৭০ টাকা, তেলাপিয়া ৩শ’ টাকা ও শিং মাছ ৬শ’ টাকা, শোল মাছ ৮শ’ টাকা, পাবদা ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, মলা মাছ ৬শ’ টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৪শ’ টাকা, মাঝারি আকারের বোয়াল ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা, গুঁড়ামাছ ৪শ’ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ’ টাকা, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা ও রূপচাঁদা ১ হাজার টাকা দরে।
Discussion about this post